ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৯ জুন, ২০২৪ | ১:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
নতুন ৩০ শতাংশ আয়কর হার থেকে রেহাই পাচ্ছেন উচ্চধনীরা
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য করহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করার পর এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এ হার বৃদ্ধির ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা যোগ হবে বলে আশ
২৯ জুন, ২০২৪ | ১:১৯ পিএম
![নতুন ৩০ শতাংশ আয়কর হার থেকে রেহাই পাচ্ছেন উচ্চধনীরা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/06/29/20240629131936_original_webp.webp)
সরকার ২০২৩–২৪ অর্থবছরে করদাতাদের আয়ের ওপর (২০২৪–২৫) বাড়তি যে কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছিল, তা থেকে পিছিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুসারে, বর্তমানে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ আয়কর শ্রেণির হার ২০২৪–২৫ করবর্ষের জন্য অপরিবর্তিত থাকবে। এটি ২০২৫–২৬ করবর্ষ থেকে শুরু করে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হতে পারে।
৬ জুন ঘোষিত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করার পর অর্থমন্ত্রী ২০২৪–২৫ করবর্ষের জন্য এ হার ৩০ শতাংশে বাড়ানোর সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশে অর্থবছর ও আয়বর্ষ একই, যা ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী ক্যালেন্ডার বছরের ৩০ জুন শেষ হয়। তবে করের জন্য এ সময়ের মধ্যে অর্জিত আয় পরবর্তী অর্থবছরে মূল্যায়ন করা হয়।
কর সংক্রান্ত আরেকটি বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ট্যাক্স রিটার্নে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি আয় দেখানো হলে ট্যাক্স ফাইল অডিট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ আয়কে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আয়কর আইনে বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।
২৫ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এসব বিষয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সাক্ষাতের পর এনবিআর চেয়ারম্যান বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জানান। প্রস্তাবিত নীতিগত সংশোধনী ইতোমধ্যে আইনি পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জনগণ এবং অর্থনীতিকে মহামারির ধাক্কা থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ২০২০–২১ অর্থবছরে ব্যক্তিগত আয়করের সর্বোচ্চ হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
বর্তমানে এনবিআর পাঁচটি শ্রেণির [স্ল্যাব] আওতায় ব্যক্তিগত আয়কর সংগ্রহ করে।
সাড়ে তিন লাখ টাকার করমুক্ত আয়সীমার পর থেকে করের বিভিন্ন হার শুরু হয়। সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, সাড়ে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, সাড়ে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ২০ শতাংশ এবং সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর সংগ্রহ করা হয়।
অডিট, ট্যাক্স ও পরামর্শ পরিষেবা প্রদানকারী ফার্ম স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির একজন অংশীদার স্নেহাশিষ বড়ুয়া বলেন, 'করের যথাযথ প্রভাব কেবল নতুন ৩০ শতাংশ করশ্রেণির আওতায় পড়া উচ্চ-আয়কারীদের জন্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।'
'যদি গত বছরের ব্যক্তিগত আয়কর হার অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে এনবিআরের প্রত্যাশিত রাজস্ব হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, যদি কর্পোরেট আয়কর হারও অপরিবর্তিত থাকে, তবে এনবিআর অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে। কারণ বিলে ২৫ শতাংশ বা সাড়ে ২৭ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও আগে এটি সাড়ে ২৭ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ ছিল।'
'এতে হয়তো করহার কমানোর সুবিধা পাবেনা কর্পোরেট। আমদানি বা সরবরাহ পর্যায়ে ব্যবসায়িক আয় ন্যূনতম কর ব্যবস্থার অধীন কি না তার ওপর নির্ভর করে। যদি কর্পোরেট আয় কম হয় এবং উল্লিখিত ন্যূনতম কর ব্যবস্থার আওতায় পড়ে, তাহলে হ্রাসকৃত হার কর্পোরেটদের জন্য যেমন সুবিধাজনক হবে না, তেমনি বর্ধিত করহার এনবিআরকে উপকৃত করবে না,' তিনি আরও বলেন।
ট্রাস্ট-তহবিলের মূলধনী আয়ে কর
কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনী আয়ের [ক্যাপিটাল গেইন] ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনী আয় করমুক্ত থাকছে।
তবে মূলধনী আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে কর প্রযোজ্য হবে। এসব ক্ষেত্রে আয়ের ওপর কর পৃথক করদাতাদের কাছ থেকে দুটি উপায়ে সংগ্রহ করা হবে।
প্রথমত, যদি কোনো ব্যক্তি শেয়ার কেনার পাঁচ বছরের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করেন, তাহলে তাদের আয়কর শ্রেণি অনুযায়ী কর দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তি শেয়ার কিনে পাঁচবছর পর একই মুনাফা করলে তার করের হিসাব হবে ভিন্ন। এক্ষেত্রেও তার ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি এক লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ১৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।
অডিটে ছাড়
অডিটের প্রয়োজনীয়তা সহজ করতে এবং হয়রানি কমিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রী এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইনে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।
সংশোধিত প্রবিধান অনুযায়ী, আগের বছরের চাইতে ট্যাক্স রিটার্নে ১৫ শতাংশ আয় বেশি দেখালে ট্যাক্স ফাইল অডিট করা হবে না। সংশোধিত রিটার্নের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য থাকবে। শুধু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা এ সুযোগ পাবেন।
হেবা দলিলে উৎসে কর নেই
সাধারণভাবে, হেবা হলো সম্পত্তির নিঃশর্ত হস্তান্তর। বাজেট প্রস্তাবে জমি, প্লট এবং ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি লেনদেনের জন্য হেবা দলিলে উৎসে কর আরোপের বিষয় ছিল। যদিও সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
আগের নিয়মে ভাইবোন, বাবা-মা ও সন্তান, স্বামী-স্ত্রী, এবং দাদা-দাদি ও নাতি-নাতনিদের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য হেবা দলিলে উৎসে কর ছিল না।
বর্তমানে হেবা দলিলে দুই হাজার ৫১০ টাকা কর দিতে হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ টাকা, স্ট্যাম্প শুল্ক এক হাজার টাকা, হলফনামা স্ট্যাম্প ৩০০ টাকা, কোর্ট ফি ১০ টাকা ইত্যাদি।
- ট্যাগ সমূহঃ
- আয়কর
![নতুন ৩০ শতাংশ আয়কর হার থেকে রেহাই পাচ্ছেন উচ্চধনীরা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)