ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৮ মার্চ, ২০২৫ | ৪:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার: প্রধান উপদেষ্টা
৮ মার্চ, ২০২৫ | ৪:১১ পিএম

ছবি: সংগ্রহ
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, নারীরা যেন নির্যাতনের শিকার হলেও সহজেই অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীরা সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখলেও এখনও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সরকার দুঃস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল ও ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। আরও কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নারী নিপীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি "নতুন বাংলাদেশ" গড়ার স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশের নারীরা ইতোমধ্যেই রাজনীতি, অর্থনীতি ও ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে।
কয়েকদিন আগে আয়োজিত "তারুণ্যের উৎসব ২০২৫"-এ রেকর্ডসংখ্যক নারী ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার নারী এতে অংশ নেয়। এই ব্যাপক অংশগ্রহণই প্রমাণ করে, বাংলাদেশে নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠায় সমাজের পুরুষরাও সমর্থন দিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীবিরোধী যে কোনো শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে অবশ্যই রুখতে হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আজও অনেকেই নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাদের খাটো করে দেখে। তবে সমাজে নারী-পুরুষের সমতা আনতে হলে এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। ফলে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসেও নারীদের সংগ্রাম অবিস্মরণীয়। তিনি তেভাগা আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীদের আত্মত্যাগ কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না। নতুন বাংলাদেশ গড়তে নারী-পুরুষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের পরিবার গঠন করতে হবে।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি দেশের সকল নারীকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ-বীরাঙ্গনাসহ সকল সংগ্রামী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
