ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৮:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
নিম্ন জন্মহারে নতুন রেকর্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৮:০ পিএম
![নিম্ন জন্মহারে নতুন রেকর্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/13/20241213143442_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
নিম্ন জন্মহারে নতুন রেকর্ড গড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সম্প্রতি অঞ্চলটির পরিসংখ্যান বিভাগ ইউরোস্ট্যাট এ তথ্য দিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে জন্ম নিম্নহার আগের যেকোনো রেকর্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছে, যা অঞ্চলটির জনমিতি চ্যালেঞ্জের তীব্রতা প্রকাশ করছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে গত বছর ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, যা ১৯৬১ সালে তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২২ সালে সর্বনিম্ন জন্মহারের রেকর্ড গড়ে ইইউ। কিন্তু পরের বছরের পরিসংখ্যান তা অতিক্রম করে গেছে। অঞ্চলটিতে ২০২২ সালের তুলনায় গত বছর জন্মহার ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম, যা বার্ষিক হিসাবেও রেকর্ড সর্বোচ্চ হ্রাস।
গত বছর অঞ্চলটিতে ৪০ লাখ শিশু জন্ম নেবে, এ পূর্বাভাস দিয়েছিল ইউরোস্ট্যাট। কিন্তু বাস্তবে সংখ্যাটি সে তুলনায় অনেক কম।
১৯৬০-এর দশকের পর ইইউ দেশগুলোয় জন্মহার তীব্রভাবে কমেছে, যা অঞ্চলটির রাজস্ব ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা কমছে এবং স্বাস্থ্যসেবা ও পেনশনের মতো ব্যয় বাড়ছে।
জনমিতি বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী ও রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপীয়দের কম সন্তান নেয়ার প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় রূপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরো তীব্র হতে পারে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক কর্মকর্তা গুয়াংইউ ঝাং বলেন, ‘চাকরির নিরাপত্তাহীনতা, জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি, বাড়ির দাম এবং কভিড-১৯ মহামারী, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সংকট সম্ভাব্য অনিশ্চয়তা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা সন্তান নেয়ার মতো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ উইলেম অ্যাডেমার মতে, তরুণদের এখন শ্রমবাজার, আবাসন এবং সম্ভবত ডেটিং বাজারেও নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে আগের তুলনায় বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এসবও কম সন্তান নেয়ার প্রবণতাকে দীর্ঘস্থায়ী করে তুলছে।
রোমের লুইস ইউনিভার্সিটির জনমিতিবিষয়ক অধ্যাপক মারিয়া রিটা টেস্টা বলেন, ‘সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্তে অনেক কারণ প্রভাব ফেলে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ নতুন কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
অঞ্চলটিতে নারীরা আগের তুলনায় দেরিতে সন্তান নিচ্ছেন। ইউরোস্ট্যাটের আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম সন্তানের জন্ম নেয়ায় নারীদের গড় বয়স বাড়ছে এবং ২০১৩ সালের ২৮ বছর ৮ মাস থেকে বেড়ে ২০২২ সালে সেটি প্রায় ৩০ বছর হয়েছে।
এছাড়া গত দশকে ৪০ বা তার বেশি বয়সী মায়েদের হার দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ বেড়ে আড়াই থেকে ৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এ হার মাতৃত্বের বিলম্বকে প্রতিফলন করে। অনেক নারী সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্তকে প্রজনন বয়সের সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে।
সন্তান কম নেয়ার এ প্রবণতা ইতালি, স্পেন, গ্রিস, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোয় সবচেয়ে তীব্র। এসব অঞ্চলে গত এক দশকে জন্মের হার কমেছে অন্তত এক-চতুর্থাংশ।
উইলেম অ্যাডেমা বলেন, ‘কম প্রজনন হারের সঙ্গে সমন্বিত ভবিষ্যতের জন্য এসব অঞ্চলের সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং অভিবাসন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।’
তরুণদের সরকারি সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মারিয়া রিটা বলেন, ‘জন্মহার বাড়াতে একটি নির্দিষ্ট কৌশল প্রয়োজন। যার মাধ্যমে ইইউর তরুণদের শিক্ষা, শ্রমবাজার, মানসিক স্বাস্থ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের বাসস্থান পেতে সহায়তা করা হবে।’
![নিম্ন জন্মহারে নতুন রেকর্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)