ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ২:২৯:৪৪ এএম

নিষেধাজ্ঞা শেষে বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ সংকট

১৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১:০ এএম

নিষেধাজ্ঞা শেষে বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ সংকট

ছবি: সংগ্রহ

সাগর ও নদী থেকে মাছ আহরণের পর তা বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে অবস্থিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে আসেন জেলেরা। সেখান থেকে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ৪ নভেম্বর। প্রথম দিকে ইলিশের সরবরাহ ভালো ছিল। চলতি সপ্তাহে ইলিশ সংকটে পড়েছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। নদ-নদীর অন্য মাছের ওপর নির্ভর করে চলছেন আড়তদাররা।


কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী ও জেলেরা বলছেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এখন যে ইলিশ আসছে, তা বরিশাল ও ভোলার বিভিন্ন নদ-নদীর। হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার মেঘনা, কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, তেঁতুলিয়া, লতা, নয়াভাঙ্গুলী এবং ভোলার ইলিশা ও গজারিয়া নদীর ইলিশ আসছে আড়তে। সাগরের ইলিশ এখন বরিশালে আসছে না। কারণ পদ্মা সেতু চালুর পর সড়ক পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত সহজ হয়েছে। কুয়াকাটা ও বরগুনাসহ উপকূলের জেলেরা আলীপুর-মহিপুর এবং পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তগুলোয় ইলিশ বিক্রি করছেন। পাইকাররা সহজে মাছ কিনে সড়ক পথে দেশের সর্বত্র পাঠাতে পারছেন। আগে ট্রলার আসত বরিশালে। তখন জ্বালানি তেল খরচ হলেও তাদের লাভ হতো। এখন আর সে খরচ লাগছে না। এজন্য বরিশালে সাগরের ইলিশ নিয়ে আসছেন না জেলেরা।


বরিশাল পোর্ট রোড পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি সপ্তাহে মাছের আকাল পড়েছে। আগের সপ্তাহেও আড়তে এক-দুই হাজার মণ ইলিশ নিয়ে এসেছেন জেলেরা। সেখানে এখন ১৫০-২০০ মণ ইলিশ আসছে প্রতিদিন। অর্থাৎ যে ইলিশ আসছে তা আগের তুলনায় ৫ ভাগের ১ ভাগ। ১ নভেম্বর থেকে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় মাছ কম আসছে। তার ওপর সাগরের ইলিশ মোকামে আসছে না। জেলেরা সাগর মোহনায় মৎস্য বন্দর থাকায় সেখানেই মাছ বিক্রি করছেন। বরিশাল ও ভোলার নদ-নদীতে যা ধরা পড়ছে তার একটি অংশ বরিশাল আড়তে আসছে। আমরা সামান্য কিছু ইলিশের ওপর ভরসা করেই এখন ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি।


বরিশাল পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের লিয়া মৎস্য আড়তের মালিক মো. নাসির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নদীর ইলিশ যা আসছে, তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। ইলিশ সংকট থাকায় বাজারে দামও বেশি। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকা করে। এক কেজির ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ টাকা করে। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। তিন-চারটায় এক কেজি হয়—এমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬৭৫-৭০০ টাকা করে।’

 

মৎস্য আড়তদার ও ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানান, উপকূলীয় জেলেরা সাগর থেকে জাটকা ইলিশ শিকার করে আলীপুর ও মহীপুরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সেখান থেকে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তারা জানলেও কোনো অভিযান পরিচালনা বা খোঁজখবর নেন না।

 

এদিকে বরিশালের নদ-নদীতে জেলেরা দিন-রাত জাল ফেলে ইলিশের দেখা পাচ্ছে সামান্যই। তা দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জেলেদের দাবি। তারা বলছেন, মা-ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর নদীতে ভালোই মাছ পেয়েছেন। চলতি সপ্তাহ থেকে নদীতে তেমন একটা মাছের দেখা মিলছে না।

 

হিজলার বাউশিয়া এলাকার জেলে সোলাইমান বলেন, ‘দিন-রাত জাল ফেলে নদীতে ১০-২০ কেজি ইলিশ মিলছে। আগে এ সময়ে এক মণের বেশি মাছ পেয়েছি। এখন ট্রলারের জ্বালানি তেল, জেলেদের খোরাক, বেতন ও ঋণের কিস্তিসহ পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপর ১ নভেম্বর থেকে জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।’

 

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ সময় নদীতে ইলিশ ও জাটকা এমনিতেই একটু কম থাকে। এ কারণে বরিশালে মাছ কম আসছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে সাগরে। তবে সাগরের মাছ এখন আর বরিশালে আসছে না।’

 

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কলাপাড়া বা বরগুনা থেকে একটি ফিশিং বোট বরিশালে আসতে দুই ব্যারেল জ্বালানি তেল লাগে। খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। পদ্মা সেতুর কারণে জেলেরা বরিশালে না এসে সরাসরি মাছ পাঠাচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে তাদের সময় ও টাকা—দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে।’

 

মৎস্য কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সঠিক নয়। কুয়াকাটা হয়ে পরিবহন বরিশালে আসতে দুটি জেলা অতিক্রম করে। বরিশালে বসে আমরা জাটকা পাচারের খবর পেলে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করব।’

নিষেধাজ্ঞা শেষে বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ সংকট