ঢাকা শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ - ২:১০:২৯ পিএম

পশু আমদানিতে সম্মতি দেবে না প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

২১ মে, ২০২৪ | ২:৬ পিএম

পশু আমদানিতে সম্মতি দেবে না প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

কোরবানি বা অন্য যে কোনও কারণে বা কোনও অজুহাতে পশু আমদানিতে সম্মতি দেবে না প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাদের যুক্তি, পর্যাপ্ত পশু উৎপাদনে এখন সক্ষম বাংলাদেশ। এ খাতে যুক্ত হয়েছেন লাখ লাখ তরুণ উদ্যোক্তা খামারি। বিনিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কোরবানিসহ সারা বছরের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পশু দেশেই সরবরাহ করছেন খামারিরা। তাই আপাতত দেশে পশু আমদানির কোনও প্রয়োজন নেই বলে।

 

রাজধানীর মাংস বিক্রেতা সমিতির ভাষ্য অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের বিক্রি এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। কারণ দেশে গরুর দাম বেড়েছে অত্যাধিক। বাড়তি দাম দিয়ে গরু কিনে মাংস বিক্রির ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার চাপে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ভোক্তা পর্যায়ে দেশি গরুর মাংসের চাহিদা কমছে। এই সুযোগে হিমায়িত পণ্যের নামে দেশে ঢুকছে গরুর মাংস। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাজধানীর মহানগর মাংস বিক্রেতা সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম।

 

গরুর মাংসের এত বেশি দাম নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার কথাও ভাবছে সরকার। গত ৭ এপ্রিল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ঢাকা সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার সঙ্গে বৈঠকে গরু আমদানি নিয়ে আলোচনা করেন। ব্রাজিলের মন্ত্রী বাংলাদেশে হিমায়িত গরুর মাংস বিক্রির প্রস্তাব দেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, তিনি ব্রাজিলকে সম্ভব হলে জ্যান্ত গরু পাঠাতে বলেছেন। এই কোরবানির ঈদের আগেই গরু পাঠানোর কথাও বলেন তিনি। তবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

এর আগে গত ২৮ এপ্রিল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেন, কোরবানির জন্য গবাদিপশু আমদানির কোনও প্রয়োজন নেই। কোনও অবস্থাতেই পশু আমদানির অনুমতি দেবে না সরকার। সারা বছরের পশুসহ পবিত্র ঈদুল আজহার সময় যে পরিমাণে পশু কোরবানির জন্য প্রয়োজন হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি পশু এই মুহুর্তে প্রস্তুত হয়ে আছে। কাজেই কোনও অবস্থায় পশু আমদানির প্রয়োজন নাই। এই মুহূর্তে পশু আমদানি করলে দেশের শত শত খামারি পথে বসে যাবে। তারা তাদের পশুর ন্যায্য দাম পাবেন না।

 

এরপর গত ১৬ মে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর মন্ত্রী আবদুর রহমান জানান, এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কোনও সংকট হবে না। কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি যা গতবারের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে কোনোরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই।

 

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, এই খাতে যুক্ত দেশের হাজার হাজার তরুণ খামারির স্বার্থে হিমায়িত মাংস আমদানিও নিরুৎসাহিত করা উচিত। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের এসব উদ্যোক্তারা পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ না করে নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করছেন। সরকার এদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। এমন পরিস্থিতিতে হিমায়িত মাংস আমদানি করলে এসব তরুর উদ্যোক্তা খামারি লোকসানের কবলে পড়বেন।

 

এদিকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে আমদানিকৃত মাংসের ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হিমায়িত মাংসের ওপর ভ্যাট আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে এই শিল্পের প্রসারে সংস্থার কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তারা বলছে, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসছে হিমায়িত গরুর মাংস। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২০ টন। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৫৫ টন। তার আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি হয় মাত্র ১৮ টন।

 

ট্যারিফ কমিশন আরও বলছে, বেকার তরুণসহ অনেকেই এখন যুক্ত হচ্ছেন খামার খাতে। বাড়ছে এ খাতের সম্ভাবনাও। এমন অবস্থায় মাংস আমদানির সিদ্ধান্তেও ক্ষতি হবে এই শিল্পের।

 

দেশের গরুর খামারিদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে বিদেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি সাপেক্ষে আমদানি নীতি অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ শুল্ক দিয়ে হিমায়িত মাংস আমদানি প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেন।

 

সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, দেশের গবাদি পশুর খামারিদের সক্ষায় সরকারকে টিসিবির মাধ্যমে পশুখাদ্য আমদানি করে প্রতিটি উপজেলায় খামারিদের মধ্যে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করা উচিত। মাংস শিল্পকে রক্ষায় ভারতসহ অন্য যে কোনও দেশ থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে। খামার পর্যায়ে ২০ বছর আয়কর ছাড় দেওয়া উচিত। খামারিদের বিনা জামানতে কম সুধে ঋণ সুবিধা দিতে হবে। পশুর টিকা, ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা সহজতর করে বিনামূল্যে দিতে হবে।

পশু আমদানিতে সম্মতি দেবে না প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়