ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৫:০৩:০০ পিএম

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সিদ্ধান্ত

১১ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:২০ এএম

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সিদ্ধান্ত

ছবি: সংগ্রহ

দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান তথা ল ফার্ম নিয়োগ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আজ রোববার এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই ওই প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা নেবে বাংলাদেশ।

 

এদিকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং অভিবাসন ব্যয় কমানোর জন্য সহায়তা চেয়ে সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূতকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে।

 


গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো ছাড়াও এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদে ফরেনসিক অডিটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার নিয়োগ, ব্যাংকিং খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের অনুমোদন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অডিট কমিটি পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে অর্থনীতির সমসাময়িক বিষয়ের ওপর একটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশ থেকে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে এরই মধ্যে এসব দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে তাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখন সার্বিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হবে। একই সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

 


প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশটির হাইকমিশনার ডেরেক লোর প্রতি আহ্বান জানান। সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর লক্ষ্যে ঢাকার সঙ্গে কাজ করার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, প্রবাসীরা যেন তাদের পরিবারের কাছে আরও বেশি অর্থ পাঠাতে পারেন, সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার অভিবাসনের ব্যয় কমিয়ে আনতে চায়। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে নিয়োগের খরচ কমানোর জন্য একটি মডেল কাঠামো তৈরি করার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

 

 হাইকমিশনার সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক নিয়োগ ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এতে মানব পাচার ও শ্রমিক শোষণের আশঙ্কা কমে যায়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, শিপিং, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বৈরাচারী সরকার পতনের মাত্র তিন মাসের মাথায় অর্থনীতি ভালোভাবে পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। এ দেশে এখন ব্যবসা করার উপযুক্ত সময়।

 

সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ফ্রান্সিস চং বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব করেছিল। প্রস্তাবিত এফটিএর ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছে। উভয় দেশই এখন কীভাবে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করা যায়, তার সুযোগ নির্ধারণ করবে।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাঁর সরকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে এবং সার্ককে দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। তিনি আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য সিঙ্গাপুরের সমর্থন চান। প্রতিক্রিয়ায় ডেরেক লো জানান, তাঁর দেশ এ ব্যাপারে ইতিবাচক রয়েছে।

 

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ঢাকা তার পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মিত্রদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। আমরা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমাদের সর্বত্র সেতুবন্ধ নির্মাণ করতে হবে।’

 


নিয়মবহির্ভূতভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কার্যক্রমে আসা নগদে গত ২১ আগস্ট প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রশাসকের আবেদনের ভিত্তিতে ফরেনসিক অডিট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ। এ অডিটের মাধ্যমে নগদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কী পরিমাণ জাল ই-মানি ছাড়া হয়েছে, শেল কোম্পানির আড়ালে বিদেশি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ দেখানো, নগদের মালিকানায় ডাক বিভাগের নাম ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সিদ্ধান্ত