ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:০৩:০৫ পিএম

পাল্টে যাচ্ছে যুদ্ধের গতিপথ

১৭ মে, ২০২৪ | ২:৪০ পিএম

পাল্টে যাচ্ছে যুদ্ধের গতিপথ

সম্প্রতি ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের অনেকটা ভেতরে প্রবেশ করেছে রুশ সেনারা। রুশ আক্রমণ ঠেকাতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে ইউক্রেনকে। অথচ ২০২২ সালেই রুশদের কাছ থেকে এক অসামান্য বিজয়ের মধ্য দিয়ে খারকিভ পুনর্দখল করেছিল ইউক্রেন।

 

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পরাজয় হবে এবং তাদের ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বের করে দেওয়া হবে; ইউক্রেন-রুশ যুদ্ধ নিয়ে ১৮ মাস আগেও হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের সম্ভবত এমনই ধারণা ছিল। তবে কয়েক মাস ধরে চলা ধীরগতির রুশ স্থল অভিযানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ঠেকাতে রুশদের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র ব্যবহার দেখে বাইডেন প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাদের চিন্তার কারণ হলো, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধে যথেষ্ট গতি অর্জন করছেন। হোয়াইট হাউস তাই উদ্বিগ্ন যে, যুদ্ধের গতিপথ বদলাচ্ছে এবং রাশিয়ার জয়ের সম্ভাবনাও বাড়ছে। অথচ একসময় চলমান যুদ্ধে রুশদের জয়কে প্রায় অসম্ভব মনে করা হচ্ছিল। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের

 

রাশিয়া বৈদ্যুতিক যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সরবরাহ করা ভারী অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র সফলতার সঙ্গে ঠেকাতে পেরেছে। কৌশলগুলোকে দেরিতে ব্যবহার করা হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফল পাচ্ছে রুশ সেনারা। অন্যদিকে ইউক্রেনকে ৬১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহায়তা পাঠানো হবে কি না সে বিষয়ে ওয়াশিংটনে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে যা রুশ অগ্রগতি থেকে তৈরি হওয়া চাপের কারণেই হয়েছে। যদিও কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছে।

 

মার্কিন কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, নতুন অস্ত্র সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে রুশ আধিপত্য কমে আসবে। তাদের ধারণা, সম্ভবত জুলাইয়ের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যদি সামনের সারিতে আরও বেশি তরুণ সেনা মোতায়েন করতে পারেন, তাহলে সেটিও রুশ আধিপত্য কমাতে সহায়তা করবে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে কী ঘটবে সেটা ভাবতে কিছুটা ইতস্তত বোধ করছেন; কারণ তাদের মনে সন্দেহ আছে কিছু বিষয় নিয়ে। প্রথমত, জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রতিরোধ টিকতে পারবে কি না এবং দ্বিতীয়ত জেলেনস্কি পরের বছর তার পরিকল্পিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে সক্ষম হবেন কি না; যেহেতু এ বসন্তে চালানো ইউক্রেনীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে।

 

গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন সংবেদনশীল মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা করার কারণে নিবন্ধটির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া মার্কিন ও সহযোগী কর্মকর্তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

 

মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন অস্ত্র পাঠানো বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে রোববার (১২ মে) বলেছিলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে এর পেছনে ভালো খরচ হচ্ছে।’ তিনি মার্কিন টিভি চ্যানেল সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমরা দ্রুত সহায়তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’ কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনে পশ্চিমা সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হতে পারে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এমন পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ম্যাক্রোঁর অফিস সম্প্রতি বলেছে, বাইডেন পরামর্শটির পক্ষে আছেন।

 

পর্দার আড়ালে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কয়েকজন সহযোগী চিন্তিত অবস্থায় রয়েছেন কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছে, এমনকি পুতিনও। তাদের প্রধান উদ্বেগ হলো, রাশিয়া যুদ্ধের প্রথম ২৭ মাসে হারানো অস্ত্রশস্ত্রের অভাব পূরণ করতে পেরেছে। পুতিন যেমন আবার তার অবস্থান শক্ত করছেন ঠিক তেমনি বাইডেনও পরের মাসে ইতালিতে নিকটতম মিত্রদের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ফিনল্যান্ডে গত গ্রীষ্মে বাইডেন দাবি করেছিলেন, পুতিন ‘ইতোমধ্যে যুদ্ধে হেরেছে’। কিন্তু সাম্প্রতিক চিত্র দেখে বাইডেন আবার একই দাবি করতে পারবেন কি না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

 

মার্কিন সামরিক সহায়তা বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে আরও কম বয়সি সেনা যুক্ত করার আইনটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে। ইউক্রেন শুধু সৈন্যের তীব্র ঘাটতিতে ভুগছে না, বরং যারা নতুন করে সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।

ওয়াশিংটনের কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর রুশ বিশেষজ্ঞ মাইকেল কফম্যান বলেছেন, এসব রুশ সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থায়ী হবে না এবং রুশ বাহিনী সম্ভবত গ্রীষ্মে একটি বড় হামলা চালাতে পারে।

পাল্টে যাচ্ছে যুদ্ধের গতিপথ