ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১০ নভেম্বর, ২০২৪ | ২:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
পোশাক তৈরির উৎপাদন কমার আশঙ্কা থাকলেও, কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে
১০ নভেম্বর, ২০২৪ | ২:২৯ পিএম
![পোশাক তৈরির উৎপাদন কমার আশঙ্কা থাকলেও, কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/10/20241110142858_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোয় সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয় চরমভাবে। ফলে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে জাহাজীকরণ করা যায়নি। এর প্রভাব পড়ে কার্যাদেশে।
আরও পড়ুন
তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কার্যাদেশ চলে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোয়। কারো কারো দাবি, এর পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশের মতো হবে। এতে সামনের বছরের প্রথম প্রান্তিকে কমে যেতে পারে ৬ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, সম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে কার্যাদেশ কমেছে ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি হয়েছে ৪৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৬৮ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। তুলা, সুতা, বস্ত্রসহ সব ক্যাটাগরির পণ্য আমদানিই এ সময়ে বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে বস্ত্র ও এ-সংক্রান্ত পণ্য। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ২০৬ কোটি ১৬ লাখ ডলারের বস্ত্র আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময় হয়েছিল ১৬৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের। এক বছরের ব্যবধানে বস্ত্র আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানি করেছেন উদ্যোক্তারা। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৯৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের, আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের। এ সময় তুলা আমদানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
তৈরি পোশাক খাতের কার্যাদেশ কমার পরও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। কার্যাদেশ না কমলে আমদানি আরো অনেক বেশি হতো বলে মনে করছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে রফতানিতে প্রণোদনা কমিয়ে দেয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না। যার খেসারত বর্তমানে দিতে হচ্ছে এবং এ কারণে আমদানি বেড়েছে। প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ই আমরা আমদানি বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের অজুহাত দেখিয়ে প্রণোদনা বন্ধ করা হয়েছে।
এটি ২০২৬ সালেও বন্ধ করা যেত। এমনকি ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুসারে আরো তিন বছর পর্যন্ত প্রণোদনা বহাল রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তড়িঘড়ি করে অদৃশ্য কারণে কারো স্বার্থ হাসিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ সহায়তা কমিয়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয়। নগদ প্রণোদনা কমানোর ফলে দেশী সুতা কিনতে যে খরচ পড়ে তার চেয়ে কম দামে সুতা আমদানি করা যায়। ফলে খরচ বাঁচাতে স্বাভাবিকভাবেই রফতানিকারকরা সুতা বেশি আমদানি করছেন। এতে মূল্য সংযোজনও কমেছে। গ্যাস সংকটের কারণে বস্ত্র কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। এর কারণেও বস্ত্র আমদানি বেড়ে গেছে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৯২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৮৮২ কোটি ডলারের পণ্য। এক্ষেত্রে রফতানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ সময়ে নিট, ওভেন ও বিশেষায়িত বস্ত্র পণ্য রফতানি বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে হোম টেক্সটাইল রফতানি।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট ও ইভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘আগে রফতানির তথ্য বেশি দেখানো হয়েছে এবং এ কারণে আমদানি কম হয়েছে। এখন রফতানির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের অতিরঞ্জিত তথ্যের সঙ্গে বর্তমানের প্রকৃত তথ্যের তুলনা করেছে কিনা সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৫ শতাংশ রফতানি বেড়েছে। রফতানির প্রকৃত তথ্য প্রকাশের কারণে এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি বাড়বে। আগের বছরে তুলা আমদানি কম হয়েছিল, যেটি বর্তমানে বেড়ে গেছে। তাছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে স্থানীয় সুতা উৎপাদন কমে গেছে।
তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা আমদানি করা কাঁচামালের বড় অংশই এনেছেন ভারত থেকে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশটি থেকে বাংলাদেশে ১৭৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের তুলা রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১২৪ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। সে হিসাবে তাদের রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। পাশাপাশি এ সময়ে ভারত থেকে ফ্যাব্রিকস আমদানিও বেড়েছে। সুতা ও বস্ত্র রফতানি বাড়ার কারণে প্রতিবেশী দেশটির বৃহৎ টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় বড় বাজার হয়ে উঠেছে। ভারতের লাহোটি ওভারসিজ লিমিটেড, স্কয়ার করপোরেশন, ইন্দোরামার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের মতামত শুনে আসছি। কেউ বলছেন পোশাকের কার্যাদেশ কমে গেছে, কেউ বলছেন এটি ঠিক না, আবার কেউ বলছেন যে কার্যাদেশ কমলেও সেটি খুব বেশি নয়। কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্দেশ করে যে বেশি কার্যাদেশ থাকার কারণেই এসব পণ্য আমদানি করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে উপসংহার টানার জন্য আমাদের আরো তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে।’
![পোশাক তৈরির উৎপাদন কমার আশঙ্কা থাকলেও, কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)