ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩০ মে, ২০২৪ | ১০:৪৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ
পৌর বোর্ড আইনের বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ১০ লাখ টাকা করার দাবি
৩০ মে, ২০২৪ | ১০:৪৫ এএম
![পৌর বোর্ড আইনের বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ১০ লাখ টাকা করার দাবি](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/05/30/20240530104433_original_webp.webp)
দেশের পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা-সংশ্লিষ্ট ২০০৪ সালের আইনটি সংস্কার করে তাতে বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার ও আইন বিশেষজ্ঞ এবং আইনটির সুবিধাভোগীরা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল সভাকক্ষে গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতি (ম্যাব), নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও সমকাল যৌথভাবে এর আয়োজন করে। এর সমর্থনে ছিল দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/1_1714931381.jpg)
পৌরসভাকে অর্থনৈতিক ও কাঠামোগতভাবে শক্তিশালী করা দরকার। পৌরসভার সব চেয়ারম্যানকে মেয়র বানানোর মাধ্যমে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে, এই সম্মানের সঙ্গে সক্ষমতা কতটুকু বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পৌরসভার মেয়রকে তো প্রতিনিয়ত তাঁর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনভাতা দিতেই যুদ্ধ করতে হয়। তিনি আদালত নিয়ে কতটুকু সময় দিতে পারবেন।
এ জন্য এটিকে আমরা আদালত নয়, বলি সালিশি মীমাংসা বোর্ড। কোনো বিরোধ হলে অবশ্য মানুষ প্রথমে যায় পুলিশের কাছে, পরে জানতে পারে কাউন্সিলর। দেখা যায়, থানায় মীমাংসা হচ্ছে হরহামেশা। কিন্তু থানা তো মীমাংসা হওয়ার জায়গা নয়। নির্বাচনের সময় হয়তো তাঁকে ভোট দেওয়া হয়নি। মানুষ মনে করে, কাউন্সিলরকে ভোট দিইনি যেহেতু তাঁর কাছে গিয়ে ন্যায়বিচার পাব না। ফলে তিনি থানা কিংবা আদালতে যান। কিন্তু সেটা পৌরসভায় সমাধান হতে পারত।
বিরোধের বিষয়টি পৌরসভা থেকে আদালতে গড়ালে ২৫ হাজার টাকার বাধ্যবাধকতা আসবে, অন্য ইস্যুও আসবে। কিন্তু মীমাংসা করলে তো কোটি টাকার করলেও সমস্যা নেই। একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাজই হলো ঝগড়া-বিবাদ মেটানো, প্রত্যয়ন দেওয়া।
কিন্তু পৌর মেয়রের অনেক কাজ থাকে। এ জন্য প্যানেল তৈরি করা হয়, ওই প্যানেলে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর থাকেন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকেও রাখার ব্যবস্থা করা দরকার, এখানে আলোচনায় যেটি উঠে এসেছে। মূলত যেটি দরকার প্রচারণা। মানুষ যেন থানায় বা আদালতে শুরুতেই না গিয়ে পৌরসভার মেয়রের কাছে আসে। পৌর বোর্ডেই যদি বিরোধ মিটিয়ে ফেলা যায়, সেটি নিঃসন্দেহে জনগণের জন্য মঙ্গলজনক।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/2_1714931397.jpg)
বিরোধ মীমাংসা (পৌর) বোর্ড আইন এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে অন্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়; বরং যেন অন্য আইনের পরিপূরক হয়। স্থানীয় সরকারের যে আইনটি রয়েছে, সেটির আওতায় কীভাবে এটিকে কার্যকর করা যায় বা শক্তিশালী করা যায়, তা দেখতে হবে।
যাতে করে ফৌজদারি-দেওয়ানি জটিলতার মধ্যে পড়ে না যায় এবং অন্যান্য স্বার্থগোষ্ঠী যারা আছে, তাদের বিতর্কের মধ্যে যেন এটি হারিয়ে না যায়। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটিকে নারীবান্ধব, দরিদ্রবান্ধব ও স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা দরকার।
দুটি ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে– একটি হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব, আরেকটি ঘুষ দুর্নীতি। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু দক্ষ মানুষের প্রয়োজন পড়বে। ফলে জনবল দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় কিনা, দেখতে হবে। শেষ কাজটি হলো, আজকের আলোচনাকে সারসংক্ষেপ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য অংশীজনের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। স্থায়ী কমিটিতে যাওয়ার আগে যদি আমরা ভালো একটা খসড়া করতে পারি, তাহলে সেটি ভালো হবে।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/3_1714931408.jpg)
আদালতে মামলার পাহাড় জমে গেছে। এগুলো সময়মতো মীমাংসিত হচ্ছে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হচ্ছে না। ফলে কলহ-বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকেই আমাদের এখানে স্থানীয়ভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রথা চালু আছে।
বিরোধ মীমাংসা (পৌর) বোর্ড আইন তেমনি একটি আইন। মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন সেই আইনের খানিকটা বৈজ্ঞানিক ও আধুনিকায়নের প্রয়াস নিয়েছে। স্থানীয়ভাবে পৌর এলাকায় প্রচুর বিবাদ মীমাংসা হচ্ছে। দেশে আইনের শাসনের জন্য এটি সহায়ক বটে। আবার কখনও কখনও গ্রামীণ মাতবরদের হাতে ঘটনা বিকৃত হচ্ছে, কেউ যে অবিচারের শিকার হচ্ছে না– তাও নয়। ছোটখাটো বিরোধ স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা যেতে পারে। সালিশের মতো গ্রহণযোগ্য বিষয় তো রয়েছে। বিরোধ মীমাংসায় পৌরসভার কীভাবে ক্ষমতায়ন করা যায়, সেটি দেখতে হবে।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/4_1714931421.jpg)
সালিশ এবং আইন সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় নয়। সালিশ আইনি কাঠামোর মধ্যে হতে পারে। কারও অধিকার খর্ব না করে কীভাবে সালিশি কাজ করা যায়, সেটা দেখতে হবে। অধিকাংশ মানুষ এখনও সালিশে যেতে চায়। দরিদ্র কিংবা কোটিপতি– কেউ কিন্তু কোর্টে যেতে চান না।
এই বাস্তবতা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। বাণিজ্যিক বিষয় হোক বা ব্যক্তিগত, মানুষ সালিশে সমাধান খুঁজে নিতে চাইছে। তবে শারীরিক নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতন কিংবা গুরুতর সহিংসতার ক্ষেত্রে সালিশ করা উচিত না, এমনকি আইনগতভাবেও তা সম্ভব না।
বিরোধ মীমাংসা পৌর বোর্ডে নারী কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণ জরুরি। সংরক্ষিত আসন থেকে আসছে বিধায় তারা থাকতে পারবে না, তা তো হয় না। একবার দরজা খুলে দেওয়া মানে ভেতরে আসা সবাই সমান।
আর যারা মীমাংসায় থাকবেন, মেয়র কিংবা কাউন্সিলর, তাদের আইনি বিষয়গুলো কিছু না কিছু জানা থাকে; তারপরও প্রশিক্ষণটা দরকার। প্রচারণারও প্রয়োজন রয়েছে এবং ডকুমেন্টেশন যথাযথভাবে সংরক্ষণও জরুরি।
মানুষ কীসের জন্য বা কোন বিষয়ের সমাধানের জন্য আসবে, তা জানা জরুরি। দেখা যায়, বিচ্ছেদের পর নারীরা কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে থাকেন। অল্প কিছু টাকার জন্য, ভরণপোষণের মীমাংসার জন্য ঘুরতেই থাকেন তারা। তাই আমি মনে করি, কোর্ট সবকিছুর সমাধান নয়। আমাদের বিকল্প ব্যবস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি জোরালোভাবে চিন্তা করা দরকার।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/5_1714931441.jpg)
এশিয়া ফাউন্ডেশন ৭০ বছর ধরে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কাজের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুশাসনের জন্য কাজ করা। এর মধ্যে আইনের শাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ৪২ লাখ মামলা বিচারাধীন বলা হচ্ছে, এগুলোর গ্রাম ও পৌর ভাগ করলে হয়তো দেখা যাবে পৌর এলাকাগুলোর মামলা বেশি, যেহেতু ঘনবসতি পৌরসভায় একটু বেশি থাকে।
কয়েকটি উপাত্ত থেকে জানতে পারি, মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরোধ নিরসন চায়। একই উপাত্ত বলছে, ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই তাদের বিরোধ মেটাতে বেশি সক্ষম।
লোকজন জনপ্রতিনিধিদের কাছে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ১৯ শতাংশ বলে, তারা সালিশের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চায়। তার মানে ১৩ শতাংশের বাইরে বাকি ৮৭ শতাংশই স্থানীয়ভাবে বিরোধ মেটাতে চায়।
ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের বিচারিক আওতার আর্থিক এখতিয়ারের পরিমাণ তিন লাখ টাকা হতে যাচ্ছে। একইভাবে যদি পৌর এলাকার আইনটি সংশোধন করে আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এখানকার মানুষজনও বিচার সুবিধা বঞ্চিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/6_1714931458.jpg)
দেশের আদালতগুলোতে মামলার জট লেগেই আছে। সালিশযোগ্য বিরোধ মীমাংসার জন্য গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬-এর অধীনে ইউনিয়ন পরিষদে ‘গ্রাম আদালত এবং পৌরসভায় বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইন, ২০০৪-এর অধীনে পৌর বোর্ড আইন রয়েছে।
গ্রাম আদালতের আর্থিক এখতিয়ার তিন লাখ টাকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পথে থাকলেও পৌর বোর্ড আইনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে এখতিয়ার এখনও ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে দেশের আদালতগুলোতে ৪২ লাখ মামলা বিচারাধীন। মেট্রোপলিটন এলাকায় এই মামলার জট তুলনামূলক বেশি। দেশে ৯৪ হাজার ৪৪৪ জনের বিপরীতে বিচারকের সংখ্যা একজন।
এক বিচারকের বিপরীতে মামলার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৮৮৩। ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর সময় লেগে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী– সকলেই বিকল্প পন্থায় বিরোধ নিষ্পত্তিতে জোর দিতে বিচারকসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভায় প্রায় পাঁচ কোটি জনগণ বাস করেন।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে সম্পন্ন হওয়া জাস্টিস অডিটের সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দেশের মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ আদালতের মাধ্যমে, ৪ শতাংশ মানুষ পুলিশের মাধ্যমে এবং ৮৭ শতাংশ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তির সহায়তায় বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী। পৌরসভা পর্যায়ে বিদ্যমান বিরোধ মীমাংসা বোর্ড আইনের আওতায় বিচারিক আর্থিক ক্ষমতা পঁচিশ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ থাকা এবং আইনটির অন্য কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাই দ্রুত আইনটির সংস্কার প্রয়োজন।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/7_1714931475.jpg)
ড. তোফায়েল আহমেদ
পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে যে সেকশনগুলো দেওয়া হয়েছে তাতে বেশি কিছু করতে পারবে না। সালিশ করলে কোনো লিমিট লাগে না। কিন্তু পৌর বোর্ড এর মাধ্যমে মীমাংসার লিমিট আছে। আমার অনুরোধ হচ্ছে, সালিশ পদ্ধতিটা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আনতে, যা করা যায় তা করেন।
এর বেশি চাইতে গেলে কিন্তু হবে না। আইন ও বিধির চক্করে পড়লে সালিশ ব্যবস্থা থাকবে না। আর গ্রাম আদালত আলাদা জিনিস, শত শত বছরের পুরোনো জিনিস। পৌরসভার মেয়র একজন রাজনীতি থেকে আসা মানুষ, তাকে লোকজন ভোট দেয়, কাউন্সিলরও তার ব্যতিক্রম নন। ফলে পৌর বোর্ড এর আওতায় যে বিচার ব্যবস্থা, সেটা কখনও সালিশের বিকল্প হতে পারে না। সালিশও বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নয়। সালিশে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি থাকে, সমঝোতার ক্ষেত্রে সব সময় ন্যায়বিচার হয় না, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/8_1714931492.jpg)
৪২ লাখের বেশি মামলা আদালতে বিচারাধীন। ৮৭ শতাংশ মানুষ স্থানীয়ভাবে বিরোধ মীমাংসায় আগ্রহী। তবে তারা আগ্রহী হলেও স্থানীয় বিরোধ মীমাংসার জায়গাগুলো কী, কোথায় কীভাবে হচ্ছে– সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। মানুষ যে বিচার ব্যবস্থায় সুবিচার পেতে ধীরগতির সম্মুখীন হচ্ছে, তার বিকল্প কী হতে পারে– সেটি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। আমি বলতে চাই, আমরা কি স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন বলতে শুধু অবকাঠামোর উন্নয়ন বলব, নাকি মানুষের অধিকারের কথা, শান্তির কথাও বলব। শান্তির জন্যই স্থানীয় সরকারের বিরোধ নিষ্পত্তি কাঠামো আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
দেওয়ান কামাল আহমেদ
জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, জমির দাম বাড়ছে। ফলে বিশেষভাবে সীমানা জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। আমরা যারা নির্বাচন করে আসি, আমাদের একটা প্রতিপক্ষ থাকে। তারা সাধারণত প্রভাবশালী ব্যক্তি। আমাদের দেশে আইন অমান্য করার একটা প্রবণতা আছে। আইন অমান্য করাকে নিজের একটা ক্রেডিট মনে করি আমরা। ফলে আমাদের মেয়র-কাউন্সিলরদের কাজ করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
বিরোধ মীমাংসা আইনে যে ২৫ হাজার টাকার ক্ষমতা দেওয়া আছে, এটা তো সেই অর্থে টাকাই না। দেখা যায়, পৌর এলাকায় যে জমি নিয়ে বিরোধ, তার এক শতকের দাম ২০ লাখ টাকার বেশি। এখানে আমাদের আইন প্রয়োগের এখতিয়ার থাকে না।
তা ছাড়া আইনটি সংস্কার হওয়ার পর তা বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তাতেও নজর দেওয়া দরকার। আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, আমি সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বলেছি, বিচারিক ক্ষমতাটা আসলে কার হাতে? কোনো সমস্যা হলে বিট পুলিশিংয়ের নামে প্রতিটি ওয়ার্ডে-ইউনিয়নে কিছু কিছু দালাল পুলিশের সঙ্গে কাজ করে। কোনো সমস্যা হলে তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। তাদের হাঁকডাক থাকে ব্যাপক। এটা জনপ্রতিনিধিদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাষ্কর একটি বিষয়।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/10_1714931527.jpg)
বিরোধ মীমাংসা আমরা সবাই করি। সেটি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে হোক আর পারিবারিক। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, যখন একজন বিচারকের কাছে ১ হাজার ৯০০ মামলা থাকে। এটি নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়, প্রধান বিচারপতি যথেষ্ট উদ্যোগও নেন। কিন্তু চেষ্টার পরও কাজ হয় না। ফলে সামঞ্জস্য আনার জন্য এবং আদালতের ওপর চাপ কমানোর জন্য বিদ্যমান আইনটির সংস্কার আনা যেতে পারে।
কিন্তু যখন বলা হয়, মেয়ররা ক্ষমতা চান; তাহলে আমি বলব, বাদ দেন। কিন্তু বাদ দিয়েও আপনি চলতে পারবেন না। প্রতিনিয়ত মানুষ তাদের বিরোধের সমাধানের জন্য মেয়র-কাউন্সিলরের শরণাপন্ন হয়। বিরোধে লাখ লাখ টাকার বিষয় থাকে। কিন্তু পৌর বোর্ডের বিচারিক আর্থিক এখতিয়ার ২৫ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ থাকায় আমরা আইনের আওতায় ভুক্তভোগীকে কোনো সমাধান দিতে পারি না। সালিশের আওতায় যদি এ ধরনের বিরোধের নিষ্পত্তি করি, তখন যদি কোনো একটি পক্ষ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে আমাদের করার কিছু থাকে না। একই বিষয়ে আদালতে গেলে তাদের বছরের পর বছর ঘুরতে হয় এবং হয়রানির শিকার হতে হয়। মানুষকে স্বল্পতম সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা দিতে পৌর বোর্ড আইনের যুগোপযোগী সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/11_1714931541.jpg)
জাকিয়া খাতুন
বস্তি এলাকায় ইভটিজিং, মারামারি, কলহ বেশি হয়। আমি যেহেতু বস্তিতে কাজ করি, আমি জানি সেখানকার পরিস্থিতি। লিগ্যাল এইডে গিয়েও টাকা লাগে বলে অনেক মেয়ে আমার কাছে এসে জানায়। অথচ টাকা লাগার কথা নয়। এখানে পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসায় যে আইন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা যেন জনগণের ভোগান্তির কারণ না হয়, সেটিই আমার একমাত্র প্রত্যাশা।
পরিমল কুমার দেব
পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা বোর্ড আইনটির প্রয়োগ ছিল না বললেই চলে। কিন্তু দেখুন, গ্রাম আদালতে মানুষ যায়, কারণ মানুষজন জানে সেখানে বিচারিক কাজবাজ হয়। পৌরসভারটা বেশির ভাগ মানুষ জানে না। মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন যখন পৌরসভা সমিতির কাছে এলো সংস্কারের বিষয় নিয়ে, আমরা বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে নিলাম। এখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছেন, আমিও খসড়া প্রস্তুতের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আইনটিতে বিচারিক আর্থিক ক্ষমতা ২৫ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। পৌরসভায় তো এক কাঠা জমির দাম কয়েক লাখ টাকা, সেখানে ২৫ হাজার টাকা তো কিছু না। এ জন্য পৌর মেয়রের কাছে মানুষ যায় না।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/13_1714931574.jpg)
অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন
দেশে দশকের পর দশক ধরে আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার যে অবস্থা, ওই জায়গাটা ঠিক না করে প্রান্তিক মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব হবে, আমি কিন্তু খুব নিশ্চিত নই। দুর্নীতি দমনবিষয়ক আইন আমাদের আছে; কিন্তু আমরা দুর্নীতি দমন করতে পারছি না। আমাদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং বাল্যবিয়ে বন্ধের আইন আছে; কিন্তু আমরা তা প্রয়োগ করতে পারছি না। আমরা আজ পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা আইনের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছি; কিন্তু আমিসহ বহু সাংবাদিক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আলোচনায় ছিলাম। সবাই অনেক প্রস্তাব দিয়েছিল; কিন্তু কোনোটিই গ্রহণযোগ্য হয়নি।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/14_1714931600.jpg)
আমাদের দেশে নগরায়ণ কিন্তু বাড়ছে। আমরা বলছি, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ নগরে বসবাস করবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, নগর-মহানগর হচ্ছে আমাদের। এমনও অনেক পৌরসভা আছে গ্রামের মতো, পৌরসভা হওয়ার মতো নয় জায়গাটি। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা করা হয়েছে। এখন তো এগুলোকে চালাতে হবে। এসব জায়গায় দরিদ্ররা বেশি বসবাস করে। ২০০৪ সালের পৌর এলাকার বিরোধ মীমাংসা বোর্ড আইনের দুটি দুর্বলতা দেখতে পাই। একটি হলো কাউন্সিলরদের জন্য স্থায়ী কোনো কার্যালয় বা ঘর নেই। প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য তাদের এটি জরুরি। আরেকটি বিষয় হলো, নারী কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততা সুনিশ্চিত করা জরুরি।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/15_1714931621.jpg)
বিদ্যমান ২০০৪ সালের যে বিরোধ মীমাংসা পৌর বোর্ড আইন, তাতে এখনও ১৯৭৯ সালের অর্ডিন্যান্সের রেফারেন্সে পৌরসভার পদগুলো আছে। পৌরসভা আইন ২০০৯ সালে হয়েছে, যেটি ২০১০ ও ২০২২ সালে সর্বশেষ সংশোধন হয়েছে। অতএব, এখন সংস্কার করতে গেলে দুটি আইনকে মাথায় নিয়ে সংস্কার করতে হবে। এখানে আরেকটি বিধান করা যেতে পারে, যে বিরোধগুলো নারী-সংশ্লিষ্ট, সেগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে নারী কাউন্সিলরকে রাখতে হবে।
বিরোধ মীমাংসার কাজে মেয়র মহোদয়কে সহযোগিতার জন্য কোনো কর্মকর্তা না থাকলে যেন একজন যুক্ত করা বা সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়। আরেকটি বিষয় হলো, স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে পৌর বিরোধ মীমাংসা আইনটি খুঁজে পেলাম না।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/16_1714931638.jpg)
এখানে দুটি ইস্যু– এক হচ্ছে মামলার জট কমছে না, আরেকটি হচ্ছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি। কোনো পৌর এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প চালু হলে সেখানকার সম্পত্তির দাম দ্রুত বেড়ে যায়, তখন আর ২৫ হাজার টাকা বা ৫০ হাজার, এক লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ফলে আইনের সংস্কার করে মীমাংসার বিষয়ের টাকা তিন লাখ করা হলে আমার মনে হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সেটি এক ধাপ অগ্রগতি হবে। সংস্কারের পর আইনটি যেন নারীবান্ধব হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/17_1714931653.jpg)
নারীরা সব কথা আদালতে গিয়ে বলতে পারেন না। লজ্জা বা ভয় কাজ করে, অনেকে পর্দা করেন। জনপ্রতিনিধির কাছে এসে সবটা বলতে পারেন একজন নারী। নির্যাতনের শিকার হলে শরীরের ওই অংশ দেখাতেও পারেন নারী কাউন্সিলর বা জনপ্রতিনিধি উপস্থিত থাকলে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সীমানা বিরোধ। একটা রাস্তা যখন কেউ দখল করে দেয়াল তুলে দিচ্ছে, আমরা কাউন্সিলররা যাই, কিন্তু কিছু করতে পারি না। এখানেও আইনের সংস্কার জরুরি। তাহলে আইনের প্রয়োগ সঠিকমতো করা সম্ভব হবে।
মো. জাকারিয়া
পৌর এলাকায় বিরোধ মীমাংসা আইনের যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেটি সম্পন্ন হলে আইনটির বাস্তবায়নে পৌরসভায় পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল ও অন্যান্য কাঠামো নিশ্চিত করা জরুরি। আইনটি যাতে পৌরবাসী জানতে পারে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/19_1714931693.jpg)
ওয়াহিদা বেগম
আমরা গত দুই মাসে একটা স্টাডি করেছি। তাতে দেখেছি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে নারী-সংশ্লিষ্ট বিরোধ মীমাংসার ঘটনায় নারীর অন্তর্ভুক্তির কথা তারা প্রত্যেকে বলেছেন। আর আমরা এখানে আইন নিয়ে অনেক কথা বলছি; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বিধি নিয়েও এখনই কাজ করা বা কথা বলা জরুরি বলে মনে করি।
![](https://samakal.com/media/imgAll/2024May/uploads/20_1714931706.jpg)
আমি ভুক্তভোগী হিসেবে বিরোধ মীমাংসার জন্য পৌরসভার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। থানা-আদালত করতে যেখানে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, অর্থ খরচ করতে হয় সেখানে পৌরসভায় সহজেই আমার বিরোধ মিটিয়ে দিতে পেরেছে। আমি পৌরসভার বিচারে খুশি। বিরোধ মীমাংসায় পৌরসভার কার্যক্রম সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এটি দারুণ কাজ হবে।
সুপারিশমালা
- পৌর বোর্ড আইনের বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।
- রায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজতর করা।
- আইনটির নাম পরিবর্তন করে ‘পৌর আদালত’ নামে আইনটি করার বিষয় বিবেচনায় রাখা।
- মেয়রের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে আপত্তি উপস্থাপন বা মেয়রের অনুপস্থিতিতে কে বোর্ডের দায়িত্ব পালন করবেন, তা স্পষ্ট করা।
- শিগগিরই বিধিমালা প্রণয়ন করা।
- ফরম, ফরমেট রেজিস্টার ইত্যাদির নমুনা সরবরাহ করা।
- পৌর বোর্ড কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সিটি পুলিশের বিধান রাখা।
- পৌর বোর্ডে মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তিতে সময় বেঁধে দেওয়া।
![পৌর বোর্ড আইনের বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ১০ লাখ টাকা করার দাবি](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)