ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:০৪:৩৪ এএম

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বেজার প্রতারণা

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:৫৩ এএম

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বেজার প্রতারণা

ছবি: সংগ্রহীত

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে—কারখানা স্থাপন এবং ব্যবসা পরিচালনাকে সহজতর করা। বিনিয়োগকারীদের জন্য একাধিক সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন ও বিনিয়োগের পরিবেশ সহজ করার জন্য ১২৫ ধরনের সেবা ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আওতায় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও মাত্র ২০ ধরনের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

 

বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো

বিনিয়োগকারীরা জানান, জমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানি সংযোগের মতো জরুরি সেবাগুলোর ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তারা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

 

১. ভ্যাট আইন ও বিনিয়োগের জটিলতা:
চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর ভ্যাট আইনের আওতায় জমির উপর অতিরিক্ত ১৫% ভ্যাট আরোপ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিনিয়োগকারীরা জানান, এই অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে তাদের প্রাথমিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

 

২. বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের অভাব:
অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা জমি পাওয়ার পরও বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানি সংযোগ না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন।

 

৩. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হতাশা:
প্রতিশ্রুত সেবা না পাওয়ায় অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগের পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

 

অগ্রগতি এবং বাস্তব চিত্র

২০১০ সালে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এক দশকে মাত্র ১০টি অঞ্চল চালু করা সম্ভব হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এই প্রকল্পগুলো শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও কাজের গতি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সরকার পরিচালিত দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন) এবং শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল—এখন পর্যন্ত কার্যক্রমে এগিয়ে রয়েছে। তবে বেসরকারি খাতের পরিচালিত আটটি জোনও কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানে ব্যর্থ।

 

পরিকল্পনা ও ভবিষ্যত উদ্যোগ

সম্প্রতি, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকার ১০০টি জোনের লক্ষ্য থেকে সরে এসে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য ৫ থেকে ১০টি জোনের উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের সেবার মান বাড়াতে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপনের জন্য সরকারের উচিত শুল্ক-কর খাতে সংস্কার আনা। গবেষণায় দেখা গেছে, কর হার ১% বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ সাড়ে ৩% কমে। অন্যদিকে, করভার ২০% কমালে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।

ফিকি সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। নীতিমালা ও পরিবেশের স্থায়িত্ব নিশ্চিত না করলে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আসবে না।

 

 

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সেবার মান উন্নয়ন, নীতিমালার স্থায়িত্ব এবং বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধান। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পগুলো কার্যকর হওয়া জরুরি।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বেজার প্রতারণা