ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:১০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
প্রতি কেজি সুপারিতে শুল্ক ২৫৮ টাকা
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:১০ এএম
![প্রতি কেজি সুপারিতে শুল্ক ২৫৮ টাকা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/01/14/20250114091012_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সুপারি আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নতুনভাবে আমদানি শুল্ক আরোপে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে সুপারির। এর ফলে চাহিদা থাকলেও আমদানিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন ব্যবসায়ীরা। সবশেষ গত ৯ জানুয়ারি নতুনভাবে শুল্ক আরোপ করায় প্রতি কেজিতে ২৬৭ টাকার স্থলে ২৮৫ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে। এতে বার্ষিক আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়তি শুল্কের কারণে ২০১৯ সাল থেকে আমদানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। নতুন করে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমদানি আরও কমবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে তিন দেশ থেকে আমদানি হয়েছে ২২ হাজার ৬৪৪ টন সুপারি। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে এসব আমদানি হয়েছে। দেশের সীমান্ত দিয়ে বৈধ-অবৈধপথেও আমদানি হয়েছে সুপারি। চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন কম থাকায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে গেছে সুপারি।
সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে সুপারি আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের শেষ ছয় মাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ৯১৬ টন, থাইল্যান্ড থেকে ৯ হাজার ৬২২ টন ও মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৪২২ টন। এর আগের ছয় মাসেও ২২ হাজার টনের কিছু বেশি সুপারি আমদানি হয়েছে।
দেশে সুপারির মোট চাহিদা দেড় থেকে পৌনে ২ লাখ টন। চাহিদার ৮০ ভাগই আমদানি করা হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। অল্প পরিমাণ সুপারি টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে সুপারি আমদানি শুরু হয় নামমাত্র শুল্ক হারে। ১৯৮৫ সালেও খুব বেশি ছিল না। ২০১২ সালে টনপ্রতি ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপ করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে প্রতি টনে ১ হাজার ৭৫০ ডলার শুল্কহার নির্ধারণের পর দাম বেড়ে যায় সুপারির। এতে লোকসান গুনতে থাকেন আমদানিকারকরা। একই সঙ্গে কমতে থাকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, কয়েক বছর আগেও বছরে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টন সুপারি আমদানি হতো। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে আমদানিতে ধস নামে। ওই বছর আমদানি কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৭২ টন। এরপর থেকে সুপারি আমদানির পরিমাণ ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সুপারির বেশ কয়েকজন বড় আমদানিকারক আছেন। তারাই দেশের চাহিদার একটি বড় অংশ সুপারি আমদানি করে থাকে। পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সুপারি আমদানি করে থাকে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জের আওয়াল ট্রেডার্সের মালিক আবদুল আওয়াল বলেন, কেজিতে আমদানি শুল্ক হিসাব করলে ২৬৭ টাকা পড়ে। ৯ জানুয়ারি থেকে প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা করে শুল্ক বেড়েছে। কেজিতে শুল্ক দিতে হচ্ছে ২৮৫ টাকা করে। শুল্কহার যদি আড়াইশ টাকার বেশি হয় প্রতি কেজিতে দাম বেশি পড়বেই। বেশি শুল্ক আরোপ করায় আমদানিতে লোকসান গোনা ছাড়া উপায় নেই। এত দাম দিয়ে সাধারণ ক্রেতারা কেউ সুপারি কিনতে চাইবে না।
উদ্ভিদ সঙ্ঘনিরোধ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. শাহ আলম বলেন, দেশে সুপারির চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু উৎপাদন তেমন নেই। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করে সুপারির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। এই পণ্য এখন ৮০ ভাগই আমদানিনির্ভর।
বিক্রেতারা জানান, তিন দেশ ছাড়াও সীমান্ত পথে কিছু পরিমাণ সুপারি আমদানি হয়। ভারতের লাইজুরি, বড়ছারা এবং কুয়ারতর সীমান্ত, সিলেটের তামাবিল চেকপোস্ট, জয়ন্তপুর ও কানাইঘাট থানার সীমান্ত দিয়ে আমদানি করা কিছু সুপারি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করা বেশিরভাগই অবৈধভাবে আমদানি করা। পরিমাণে তা খুবই কম। চাহিদার বড় অংশের সুপারি আমদানি বৈধপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই। খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, খুচরা বাজারের বিক্রেতারা আড়ত থেকে কিনে নেন। এরপর তারা প্রতি কেজি দরে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। আড়ত থেকে বেশি দামে কেনা সুপারি খুচরায় কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। খাতুনগঞ্জের আরেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জানায়, পাইকারিতে দাম নিতে হয় মানভেদে কেজিতে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে দাম তো আরও বেশি পড়বেই।
সোমবার বিকালে নগরীর বহদ্দারহাট ঘুরে দেখা যায়, ভালো মানের সুপারি প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অলিগলির খুচরা দোকানে ভালো মানের প্রতি কেজি সুপারি ৫০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে কিছু সুপারি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হলেও ক্রেতা কম। ভালো মানের সুপারির চাহিদা বেশি বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। খুচরা বাজারে দুয়েক দিনের মধ্যে সুপারির কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। গত বৃহস্পতিবার সুপারি আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি-খুচরা দুই পর্যায়েই দাম বেড়েছে।
![প্রতি কেজি সুপারিতে শুল্ক ২৫৮ টাকা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)