ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩০ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৫৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
প্রতি বাক্সে আলুর আমদানি ব্যয় ১৩ হাজার, কৃষক কিনছেন ২৬ হাজার টাকায়
৩০ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৫৯ এএম
![প্রতি বাক্সে আলুর আমদানি ব্যয় ১৩ হাজার, কৃষক কিনছেন ২৬ হাজার টাকায়](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/30/20241130095914_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সিগঞ্জ। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও হিমাগারে সংরক্ষিত আলুবীজের প্রতি এ অঞ্চলের কৃষকের আগ্রহ কম। সাধারণত হল্যান্ড থেকে আমদানি করা বীজের ওপরই নির্ভরশীল বেশির ভাগ আলুচাষী। তবে কৃষক পর্যায়ে পৌঁছতেই বীজের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ৫০ কেজির এক বাক্স আলু আমদানিতে খরচ পড়ছে ১৩ হাজার টাকা। কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬ হাজার টাকায়। অথচ গত বছর একই বীজ ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কৃষক বলছেন, জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। আমদানি করা বীজের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আমদানিকারকের কাছ থেকে ডিলারের হাত হয়ে কৃষক পর্যায়ে পৌঁছতেই বীজের দাম হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। বিক্রয় রসিদে দাম ১৩ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও কৃষকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ২৬ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে কৃষক পর্যায়েই আলুর দাম হবে ৮০ টাকা কেজি। আমদানি করা বীজের প্রতি কৃষকের আগ্রহকে পুঁজি করছেন ডিলাররা।
ডিলারের কাছ থেকে আলুবীজ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কৃষক নূর উদ্দিন। তিনি জানান, টঙ্গিবাড়ী বাজারের মেসার্স মাহিন এন্টারপ্রাইজ থেকে হল্যান্ডের আট বাক্স বীজ কিনেছেন। প্রতি বাক্সের দাম ২৬ হাজার টাকা নিয়েছে। তবে তার হাতে থাকা বিক্রয় রসিদে প্রতি বাক্স বীজের দাম সাড়ে ১৩ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষক নূর উদ্দিন বলেন, ‘আমি লেখাপড়া করিনি। রসিদে কত দাম লিখেছে, তা জানি না। ২৬ হাজার টাকা দিয়েই একেক বাক্স বীজ কিনেছি। এটাই সত্যি।’
মেসার্স মাহিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর কবীর বিক্রয় রসিদে কম দাম উল্লেখ করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এক বাক্স বীজ ১৪-১৫ হাজার টাকা বিক্রি করছি।’
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারন গ্রামের আলুচাষী মামুন শেখ হল্যান্ড থেকে আমদানি করা আলু আবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বীজ বিক্রি হয়েছে ১৬-১৮ হাজার টাকা। এখন দাম অনেক বেড়েছে। বিএডিসির বীজের দাম প্রতি কেজি ৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্র্যাক ও কিষাণ সিডসহ কিছু কোম্পানির বীজ বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’
বীজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অরিত্র এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. রনি শেখ বলেন, ‘জেলায় চার-পাঁচজন আলুবীজ আমদানি করেন। প্রতি বাক্স বীজের দাম পড়ে ১৩ হাজার টাকা। এর সঙ্গে আমদানিসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে অল্প লাভে ডিলারদের কাছে বিক্রি করছি। কৃষক পর্যায়ে সেটা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে শুনেছি। বীজ আমদানির জন্য যখন এলসি করেছি, তখন অল্প পরিমাণ লাভে ডিলারের কাছে বিক্রি করেছি। পরে অবশ্য ডিলার কারসাজি করে দাম বাড়ান।’
এ প্রসঙ্গে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি ডিলারদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে কৃষকের কাছে প্রতি বাক্স হল্যান্ডের আলুবীজ ১৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করার কথা জানিয়েছেন ডিলাররা। তার পরও তারা বেশি দামে বীজ বিক্রি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মুন্সিগঞ্জে ৩৪ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা থেকে ১০ লাখ ৪৫ হাজার টন আলু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭৩ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ শেষ হয়েছে। সিরাজদিখান উপজেলায় গত বছর আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর। এ বছর আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার হেক্টর। সব মিলিয়ে এ বছর বীজের চাহিদা রয়েছে ৭৬ হাজার টন। এর মধ্যে জেলার ৫৮টি হিমাগারে ৪৪ হাজার টন বীজ মজুদ রয়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর বীজ আমদানি অর্ধেক কমেছে। তাই হয়তো দাম একটু বেশি। তবে আমরা প্রতিদিন দাম তদারক করছি। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের টিমও কাজ করছে।’
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সামির হোসাইন সিয়াম বলেন, ‘জেলায় খুচরা পর্যায়ে কতজন ডিলার রয়েছেন, সে তালিকা জানা নেই। তবে তিনটি আমদানিকারক এজেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে একটি এজেন্টের বীজ বাজারে এসেছে। বাকি দুটি এজেন্টের বীজ এখনো আসেনি। বীজ আমদানির হিসাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আমাদের কাছে নেই। এ অঞ্চলের কৃষক যেহেতু অধিক আলু চাষ করেন, এজন্য আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার তথ্য আগে থেকেই থাকার দরকার ছিল।’
![প্রতি বাক্সে আলুর আমদানি ব্যয় ১৩ হাজার, কৃষক কিনছেন ২৬ হাজার টাকায়](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)