ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:৩৬:২০ পিএম

প্লাস্টিক বর্জ্যরে ৩৯ ভাগ যাচ্ছে ভাগাড়ে, ২৫ ভাগ নদী-নালায়

৬ জুন, ২০২৪ | ১১:০ পিএম

প্লাস্টিক বর্জ্যরে ৩৯ ভাগ যাচ্ছে ভাগাড়ে, ২৫ ভাগ নদী-নালায়

দেশে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য (রিসাইকেলিং) করা যায় ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৯ শতাংশ ভাগাড়ে জমা হচ্ছে এবং ২৫ শতাংশ নদী-নালাসহ মাটিতে যাচ্ছে। তবে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের হার আগের তুলনায় বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী এ হারের গড় ১০ শতাংশের নিচে। যদিও ইউরোপের দেশে আবার এ হার ৭০ শতাংশের ওপরে। তবে পুনর্ব্যবহারের মাত্রা আরও বাড়াতে হবে। মূলত বাসাবাড়ি ও ভাগাড় থেকে সঠিকভাবে সংগ্রহ না হওয়ায় ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বড় অংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা যায় না। পাশাপাশি এ খাতের বিকাশে নেই প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তাও।

 

গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে ‘টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিনিয়োগ’ শীর্ষক এক সেমিনারের এসব কথা বলেন বক্তারা।

 

পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্লাস্টিক প্রোডাক্ট বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (পিপিবিপিসি) এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

 

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যের বাজার রয়েছে। আর নাগরিকরা বছরে মাথাপিছু ৯ কেজির বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করেন। রফতানি হচ্ছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কারখানা রয়েছে, যেখানে সরাসরি ২০ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। এভাবে চললে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশে^র ৪০তম শীর্ষ প্লাস্টিক রফতানিকারক দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব সেলিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিলের (বিপিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ আফরোজ, এফবিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিন হিলালী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েট কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. কাজী বায়েজিদ কবীর। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ।

 

বাণিজ্য সচিব বলেন, দেশের প্রত্যেকে এখন প্লাস্টিকের ব্যবহারকারী, এর বিকল্প নেই। যে কারণে এ খাতকে টেকসই করতে হবে। যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে হবে। সে জন্য সঠিক নীতি সহায়তা প্রয়োজন। সঠিক পলিসি দরকার। এ শিল্পের সঙ্গে সরকারের একাধিক সংস্থা ও মন্ত্রণালয় জড়িত। সবার একসঙ্গে হয়ে কাজ করতে হবে।

 

বিপিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ আফরোজ বলেন, উন্নত বিশ্ব প্লাস্টিক বন্ধ করছে। তবে আমরা এ খাত নিয়ে বড় রফতানির সম্ভাবনা দেখছি। ফলে এ খাতকে পুরোপুরি কম্পাইন্সের মধ্যে আনতে হবে। আর এ বিষটি ব্যয়বহুল। রাতারাতি করা যাবে না। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।

 

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক শামীমা আখতার বলেন, সহজলভ্য, দীর্ঘস্থায়ী ও এর মধ্যে পণ্য ভালো থাকার কারণে কোম্পানিগুলোর মোড়কজাতে প্লাস্টিক জনপ্রিয় হচ্ছে। আমরা সবসময় আমাদের বিক্রিত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে আবার ফিরে আনতে চাই। তবে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেখেছি, চট্টগ্রামে আমরা ১০ শতাংশ প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পেরেছি। কিন্তু উৎপাদিত প্লাস্টিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে প্লাস্টিক সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা আমাদের।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক খোন্দকার মোরশেদ মিল্লাত বলেন, ছোট ছোট প্লাস্টিক কারখানায় অর্থায়নের সমস্যার কথা বলা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব খাতে বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে অর্থায়ন।

 

বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য আলাদা করে সংগ্রহ সমস্যার কারণে রিসাইকেল প্লাস্টিক পণ্যের অনেক চাহিদা থাকলেও সেটি পূরণ করা যাচ্ছে না। প্লাস্টিক খাতের উন্নয়নের দায়িত্ব কেবল বেসরকারি খাতের একার নয়। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হবে।

প্লাস্টিক বর্জ্যরে ৩৯ ভাগ যাচ্ছে ভাগাড়ে, ২৫ ভাগ নদী-নালায়