ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:০৪:১৫ পিএম

ফেব্রুয়ারিতেই চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে তেল সঞ্চালন শুরু

২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১২:৫৯ পিএম

ফেব্রুয়ারিতেই চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে তেল সঞ্চালন শুরু

ছবি: সংগ্রহ

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল পরিবহনে নতুন পাইপলাইন ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে এবং মার্চে বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে, যা দেশের জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানান, এই পাইপলাইনটি অপচয় রোধ করবে এবং তেলের পরিবহনকে আরও নিরাপদ ও কার্যকরী করে তুলবে।

 

বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, "চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, বিশেষত লাইটারেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে তেল আনার সময় অপচয় এবং খরচের বিষয় ছিল। তবে পাইপলাইনটি চালু হলে তেল পরিবহন হবে আরও সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ।" তিনি আরও বলেন, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহ করা হবে, যা বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত তেলের মধ্যে ৭০ শতাংশ। পেট্রোল ও অকটেনের সরবরাহ আগের মতোই থাকবে, রেল ও নদীপথে ট্যাংকারে করে আসবে।

 

এ প্রকল্পের জন্য ২০১৭ সালে প্রাক সমীক্ষা শুরু হয়েছিল, এবং পরবর্তীতে তার মেয়াদ একাধিকবার বৃদ্ধি পায়। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ২,৮৬১ কোটি টাকা ধরা হলেও বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৩,৬৯৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই পাইপলাইনটির জন্য ২৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ৫৯ কিলোমিটার কুমিল্লা-চাঁদপুর এবং ৮.৫ কিলোমিটার ফতুল্লা-গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।

 

বিপিসি মনে করছে, এই পাইপলাইন চালু হলে বছরে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে। তাছাড়া, নদীপথে লাইটারেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে তেল পরিবহনকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, যা তেল চুরি এবং অপচয়ের জন্য দায়ী ছিল। পাইপলাইন চালু হলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

 

এছাড়া, দেশের উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থা কিছুটা জটিল ছিল। আগে লাইটারেজের মাধ্যমে তেল বাঘাবাড়ি, সেখান থেকে ট্যাংকলরী বা রেলওয়ে ব্যবহার করে আনা হতো। তবে, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে এই সমস্যা কিছুটা সমাধান হয়েছে, যার মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন এবং সাশ্রয়ী তেল সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে।

 

এছাড়া, বর্তমান দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৩ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০৩০ সালে ৯৩ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। দেশের জ্বালানি তেলের অধিকাংশই আমদানি করা হয়, এবং এই আমদানি নদীপথে পরিচালিত হয়, তবে নদী বন্দরের নাব্যতা সমস্যা ও বড় জাহাজের বন্দরে ভিড়তে না পারার কারণে লাইটারেজ জাহাজের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল। নতুন পাইপলাইনটি এই সমস্যাগুলো সমাধান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা তেলের পাইপলাইন চালু হলে বাংলাদেশের জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সহায়ক হবে।

ফেব্রুয়ারিতেই চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে তেল সঞ্চালন শুরু