ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৮:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ফের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৮:০ পিএম
![ফের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/02/08/20250208155959_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
আসন্ন রমজান ঘিরে বাজারে আবারও শুরু হয়েছে তেল নিয়ে তেলেসমাতি। এলাকাভেদে দেখা দিয়েছে ভোজ্য তেলের সংকট। বিশেষ করে এক ও দুই লিটার বোতলজাত তেলের প্রবল সংকট। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৫ কার্টন তেলের অর্ডার দেওয়া হলে পাওয়া যায় দুই কার্টন। অন্যদিকে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বাজারে তেল এই আছে, আবার এই সংকট। নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে তেল নিয়ে পড়তে হচ্ছে আরও বিপাকে। তেলের সঙ্গে উচ্চমূল্যে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে আরেকটি পণ্য।
গত ৯ ডিসেম্বর সবশেষ ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখনও দাম বাড়ানোর আগ দিয়ে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় সয়াবিন তেল। এমন নীতি বাজারে আবারও অনুসরণ করা হচ্ছে। তিন সপ্তাহ আগে ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন। এরপর থেকে বাজারে তেলের সংকট চলছে। অবশ্য সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান ঘিরে ভোজ্য তেলে দাম বাড়ানোর এক চক্র পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকার আমতলা বাজার, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাভেদে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতজাত তেলের প্রবল সংকট। এক লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়। আর পাঁচ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫২ টাকায়। পাম অয়েল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা।
মিরপুর-১০ এলাকার আমতলা বাজারের আদর্শ জেনারেল স্টোরের আবির আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে তেলের সংকট চলছে। আমরা অর্ডার দিয়েও তেল পাচ্ছি না। ১৫ কার্টন তেলের অর্ডার দেওয়া হলে পাই দুই কার্টন। এভাবে আর কতদিন?
তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেল অর্ডার দেওয়ার আগেই অন্য পণ্য নেওয়ার চুক্তি করতে হয়। সেখানে সম্মতি দিলে তারা অর্ডার নেয়, না দিলে অর্ডার হয় না। এভাবে অর্ডার দেওয়ার পর আমাদেরও পণ্য মিলিয়ে বিক্রি করতে হয়। বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে একই এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী আল মামুন সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের বেশি দাম দিয়েই ডিলারদের কাছ থেকে কিনতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা লোকসান দিয়ে তো তেল বিক্রি করব না? একসময় বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করতে হয়েছে।
বাংলা মোটরের বাসিন্দা জায়েদা খাতুন (৩৮)। কারওয়ান বাজারে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, দুই দোকান খোঁজার পর দুই লিটার তেল কিনেছি। তিনি জানান, দাম বাড়ানো বা বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই তেলের বাজারে শুরু হয়
কৃত্রিম সংকট। অনেকেই তেল মজুদ করা শুরু করে। এতে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের মতো ক্রেতাদের। বাজার মনিটরিংয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান সময়ের আলোকে বলেন, আসন্ন রমজানে সারা দেশে দিনে ৬০টি টিম বাজার তদারক করবে। এ ছাড়া বাজার ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় রাখতে আগামী বুধবার ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, বাজারে ভোজ্য তেলের মজুদ যথেষ্ট রয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবেই বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট তৈরি করা হয়েছে। তেলের মজুদ মনিটরিং করলেই আসল রহস্য উঠে আসবে। দেশে আইন আছে, অথচ প্রয়োগ হচ্ছে না। সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ হলে বাজারে এমন সংকট তৈরি হতো না বলে মত দেন তিনি।
এদিকে ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়ানো, আমদানিনির্ভরতা কমানো এবং মজুদ বাড়াতে ২৬৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ৮ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদ (একনেক) সভায় ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
একনেক বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার জোগান দেবে (জিওবি) ২৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ২৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটি দেশের আট বিভাগের ৪২ জেলার ২০০টি উপজেলা এবং দুই সিটি করপোরেশনে বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পটির উদ্দেশে বলা হয়েছে, গুণগত মানসম্পন্ন ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ করা। এ ছাড়া কৃষকের মাঝে ডাল ও তৈলবীজ বিতরণ বা সরবরাহের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান বীজের চাহিদা পূরণ করে জাতীয়ভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।
উদ্যোগী সংস্থা কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৪ দশমিক ৮২ লাখ টন। অথচ উৎপাদিত হয় মাত্র ১০ দশমিক ৬৪ লাখ টন। অতিরিক্ত এই চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে তেল আমদানি করা হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করার মাধ্যমে ডাল ও তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এর ফলে আমদানিনির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া ডাল ও তেলের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
![ফের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)