ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:১৯:১৪ এএম

বদলে যাচ্ছে বাজেটের ধরন

২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৮:০ পিএম

বদলে যাচ্ছে বাজেটের ধরন

ছবি: সংগ্রহ

বদলে যাচ্ছে বাজেটের ধরন। আগামী জুনে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক গতানুগতিক উন্নয়ন মডেল থেকে সরে এসে সামাজিক অগ্রগতির দিকে মনোনিবেশ করা হতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে চায়। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সুশাসনও নিশ্চিত করতে চায়। বিনিয়োগ বাড়াতে বাজেটে উন্নয়ন ও রাজস্ব ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য কাটছাঁটের পরিকল্পনা রয়েছে।



বিশেষজ্ঞারা জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের শেষ বছরগুলোতে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি অনেকটাই আমলাদের জন্য একটা ‘ফরম ফিল-আপ এক্সারসাইজ’ ছিল। বাজেট ঘাটতি, সামাজিক সুরক্ষা, রাজস্ব আদায় পরিকল্পনা, এমনকি প্রকল্প প্রাধিকার নির্ণয়েও অনেকটা ‘অর্ডিনারি’ বৃত্তায়ন গড়ে ওঠে। গত কয়েক বছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা দেশের সাধারণ মানুষ। ডলার সংকট, রিজার্ভের বড় ক্ষয়সহ বৈদেশিক

 

বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিপদে ছিল দেশ। এরপরও প্রতিবারই বাজেটের আকার আগের বারের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

 

৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষত বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। অনেক ব্যাংক পড়েছে তারল্য সংকটে। আওয়ামী সরকার অর্থনীতির একাধিক সূচক কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেখানোর ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যায়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার বাড়িয়েছে। তবে উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিশৃঙ্খলার কারণে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। এ জন্য আগামী বাজেটে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিশেষত ব্যাংক খাতের জন্য কিছু নীতি-উদ্যোগ থাকতে পারে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে এবং সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ধার নেওয়া কমাবে। বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে কিছু নীতি-সুবিধা দেওয়ার কথাও ভাবছে সরকার।

 

পতিত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে বাজেটের বড় অংশই ব্যয় হচ্ছে ঋণের দায় পরিশোধে। এভাবেই চলেছে সরকারের বড় আকারের বাজেট। আর বাজেটের একটি বড় অংশই চুরি ও দুর্নীতি হাতিয়ে নেওয়া হয়। বিদেশেও পাচার হয়েছে অনেক অর্থ।

 

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে এরই মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী বাজেটে জণকল্যাণে নতুন নতুন পদক্ষেপ থাকবে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমানো, রাজস্ব আহরণের বাস্তবভিত্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ অর্জনযোগ্য মূল্যায়ন করা, খেলাপি ঋণ আদায় ও খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের ওপর পরোক্ষ করের বোঝা কমানো।

 

নতুন বাজেটের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক গতানুগতিক উন্নয়ন মডেল থেকে সরে এসে সামাজিক অগ্রগতির দিকে মনোনিবেশ করা হতে পারে। বাজেটে বেশি গুরুত্ব পাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সেজন্য পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, উৎপাদন ও আমদানি সহজ করা এবং কৃষি ও শিল্প খাতে প্রণোদনার উদ্যোগ থাকবে। বাজারব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনা থাকবে। এ ছাড়া মানুষের আয়বর্ধক কাজে গুরুত্ব দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ বরাদ্দ থাকবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতেও। এ জন্য বাজেটে বাড়তি তহবিলের দরকার হবে।

 

চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল প্রায় ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্বর্তী সরকার ১ লাখ ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে। আগামী অর্থবছরেও এডিপি বরাদ্দ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর বাজেটে ৬.৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি হবে না। পাশাপাশি এ অর্থবছরেও মূল্যস্ফীতি দুই অংকেই থাকার ধারণা করছেন তারা।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আজ সোমবার আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ডেকেছে অর্থ বিভাগ। বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও আগামী অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে সভায় চলতি ও আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার, কর-জিডিপি ও ব্যয়-জিডিপি অনুপাত এবং বহিঃবাণিজ্যের সঙ্গে লেনদেনের ভারসাম্যের প্রাক্কলন করা হবে।

 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৭.৯ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবার নতুন করে কোনো মেগা প্রকল্প নেওয়া হবে না।

 

জানা গেছে, জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেশ কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ঠিকাদার প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে চলে যায়। এতে উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে দাঁড়ানোর পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও নিম্নমুখী হয়। এনবিআরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব সংগ্রহ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা কম। যদিও এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এনবিআর কর্মকর্তারা উল্লেখযোগ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন।

বদলে যাচ্ছে বাজেটের ধরন