ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:৩২:৪৬ পিএম

বন্যায় ফসলে বড় ঘাটতি, বাড়তে পারে সংকট

৩০ অক্টোবর, ২০২৪ | ২:৩৯ পিএম

বন্যায় ফসলে বড় ঘাটতি, বাড়তে পারে সংকট

ছবি: সংগ্রহীত

বাংলাদেশের খাদ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। দেশের মোট খাদ্য চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ এখানে পূরণ হয়। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এবং নেত্রকোনা—এই চার জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫০ টন, যেখানে চাহিদা ছিল ১৮ লাখ ৭ হাজার ২৩৩ টন। ফলে, প্রায় ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৭১৭ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত হয়ে রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে লক্ষাধিক হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অন্যান্য ফসলকেও প্রভাবিত করেছে। পূর্বাঞ্চলের এই ভয়াবহ বন্যায় খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে তা সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

 

 

দেশে উৎপাদিত মোট চালের ৪০ শতাংশ আসে আমন থেকে এবং বোরো মৌসুমে ৫৫ শতাংশ। কিন্তু এবারের বন্যার কারণে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা বোরো ধানের রোপণে বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কৃষকরা বলছেন, দ্রুত উদ্যোগ না নিলে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

 

 

ময়মনসিংহ অঞ্চলে শেরপুর জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছিল, যার ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছিল, যার ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর তলিয়ে গেছে।

 

 

নোয়াখালী জেলাতেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ শতাংশ কমে যাবে, যা চালের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩ টন, কিন্তু বর্তমানে তা কমে ৫ লাখ ৭ হাজার ২৮০ টনে দাঁড়াবে।

 

 

এদিকে, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে অপুষ্টি ও রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবার গ্রহণ কমে যাওয়ার ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।

 

 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে চাল উদ্বৃত্ত জেলাগুলোর মধ্যে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঝিনাইদহ, জয়পুরহাট, শেরপুর, নওগাঁ, বগুড়া, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ভোলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে চালের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি।

 

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানিয়েছেন, বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তবে সরকার কৃষকদের আউশ ধানের চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বন্যার সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে সরকার সচেতন রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে।

 

 

এছাড়া, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যাতে স্থানীয় উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। গত এক মাসে চালের দাম বেড়েছে, যা আগামী দিনে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

4o mini

 

বন্যায় ফসলে বড় ঘাটতি, বাড়তে পারে সংকট