ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:০৫:৩৯ এএম

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার দাবি প্রক্রিয়াজাত শিল্প মালিকদের

১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:৩০ পিএম

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার দাবি প্রক্রিয়াজাত শিল্প মালিকদের

ছবি: সংগ্রহ

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পর এবার সরকারকে সাত দিনের ‘আলটিমেটাম’ দিল বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত বদল না হলে কারখানা বন্ধসহ রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছে কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি। রাজধানীর শাহবাগের ঢাকা ক্লাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বাপা। এ সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় সংস্কারের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। সংস্কার অর্থ গবির মানুষের স্বল্পমূল্যের খাদ্যে ভ্যাট বাড়িয়ে দাম বাড়ানো নয়। কৃষক, রিকশাওয়ালার পকেটের টাকা কেড়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বর্ধিত বেতনের অর্থের জোগান দেওয়া নয়।

 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ না করে ক্যালকুলেটর টিপে গরিব মানুষের ৫ টাকা, ১০ টাকার খাবার পণ্যে ভ্যাট ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় করার বুদ্ধি যারা দেয়, তারা এ সরকারের ভালো চায় না। তারা এ সরকারকে বিপদে ফেলতে চায়। কারণ এভাবে ভ্যাট বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ে না। বেভারেজ শিল্পের খুব ভালো উদাহরণ বলে জানান তারা।

 

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির দাবির পর ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে, জানিয়ে বাংলাদেশ অটো বিস্কুটস অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া সরকারকে সতর্ক করে বলেন, দাবি না মানলে কী করতে হবে, তা জানা আছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগস্ট বিপ্লব হয়েছে আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের ধারা থেকে বের হয়ে বৈষম্য নিরসনের জন্য। এ সরকার দেখি আগের ফ্যাসিবাদী সরকারকেও ছাড়িয়ে গেছে। স্বল্পমূল্যের প্রক্রিয়াজাত খাবারে ভ্যাট বাড়ানোর সমালোচনা করে শফিকুর রহমান বলেন, দরিদ্র কৃষক, রিকশাওয়ালা, নিম্নবিত্ত মানুষের পকেটের টাকা কেড়ে নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বর্ধিত বেতন-ভাতার অর্থ জোগান দেবেন? এটা হতে পারে না।

 

ভ্যাট বাড়ানোর জন্য আইএমএফের ওপর দোষ চাপাচ্ছে সরকার-এমন অভিযোগ তুলে তিনি আরও বলেন, আইএমএফ কি স্বল্পমূল্যের পণ্যে ভ্যাট বাড়িয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে বলেছে? সরকারের নীতিনির্ধাকরদের প্রতি প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশ অটো বিস্কুটস অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

 

বাপার সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, আমরা এমন একটি খাত নিয়ে ব্যবসা করি যার সঙ্গে সরাসরি শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে প্রান্তিক কৃষক জড়িত। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, এতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেশের মানুষের সংস্কৃতি যদি দেখি, অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ সকালে এক কাপ চা, একটি বিস্কুট কিংবা কেক খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এখন যদি বিস্কুট ও কেকের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পায়, তা হলে ৫ টাকার একটি বিস্কুট আর তৈরি করা সম্ভব হবে না। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষটি সহজে ক্ষুধা নিবারণের পথটি হারাবে।

 

প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ৯০ শতাংশ পণ্যের ক্রেতা নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। এসব পণ্য ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। উৎপাদন পর্যায়ে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পর প্যাকেটজাত ৫ টাকার বিস্কুট বিক্রি করে কোম্পানির কোনো মুনাফা হয় না। এ অবস্থায় ভ্যাট বাড়ালে কোম্পানি এ পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বাড়াতে পারবে না। ফলে এ খরচ কোম্পানির ওপর পড়বে। এ অবস্থায় ব্যবসায় লোকসান হলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া এ খাতের ব্যবসায়ীদের বিকল্প কোনো উপায় থাকবে না।

 

প্রসঙ্গত, ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। এর মধ্যে মেশিনে প্রস্তুতকৃত বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যের ওপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংকসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর্টিফিসিয়াল বা ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস (নন-কার্বোনেটেড) পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক শূন্য হারে ছিল এবং বর্তমানে তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে আগে ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ ছিল, যা বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার দাবি প্রক্রিয়াজাত শিল্প মালিকদের