ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | ২:২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার
৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | ২:২ পিএম
ছবি: সংগ্রহ
বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিদেশিদের বৈধতা অর্জনের জন্য আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যেসব বিদেশি নাগরিক বৈধ কাগজপত্র প্রদান করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যাদের প্রায় ২৪ হাজার জন অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে চীনের নাগরিকও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছেন, প্রায় ১১ হাজার জন। এছাড়া পাকিস্তান, মায়ানমার, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, কঙ্গো, ক্যামেরুনসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অবৈধ অবস্থান বাংলাদেশে রয়েছে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৬৯টি দেশের ৫০ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, এবং তারা এখন অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। এসব বিদেশির মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানা গেছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭২ জন বিদেশি কারাগারে রয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতের নাগরিক।
বিদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে বসবাসের পাশাপাশি নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছেন। মাদক ব্যবসা, হেরোইন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, জাল মুদ্রা কারবার, সোনা চোরাচালান, অনলাইনে ক্যাসিনো, মানবপাচারসহ সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের সঙ্গে তারা জড়িত। অনেক বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কর ফাঁকি দিয়ে উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে নিজ দেশে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসব বিদেশি নাগরিকদের অপরাধের মাত্রা এবং ধরন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যারা বেআইনিভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।
এছাড়া, বিশেষ করে পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে বিদেশি কর্মী, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কর্মরত বিদেশিরা অনেক সময় নির্ধারিত অনুমতির বাইরে কাজ করছেন। এসব ক্ষেত্রেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ৮ ডিসেম্বর এক সভায় বলেছেন, ‘‘কোনো বিদেশি নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।’’ তিনি জানান, বিদেশিদের অবৈধ অবস্থান একাধিক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়, এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, গত ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, যাতে জানানো হয় যে, অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বৈধতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমনকি উন্নত দেশগুলোর নাগরিকরাও কিছু ক্ষেত্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং রাশিয়া থেকেও কিছু বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, যাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের প্রকৃত সংখ্যা এবং তাদের অর্থ পাচারের চ্যানেলগুলোর তদন্ত করতে হবে।
বাংলাদেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কঠোর। যেসব বিদেশি ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বৈধতা অর্জন করতে পারবেন না, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই পদক্ষেপ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিদেশি কর্মীদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।