ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২ মার্চ, ২০২৫ | ৪:২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা নিয়ে বিতর্ক
২ মার্চ, ২০২৫ | ৪:২ পিএম

ছবি: সংগ্রহ
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) স্টারলিংকসহ অন্যান্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতাদের তাদের গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ রুট করতে বাধ্য করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (বিটিআরসি) অনুরোধ জানিয়েছে।
বিএসসিএলের এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য তাদের সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি ও আয়ের উৎস বাড়ানো। তবে টেলিযোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (এনজিএসও) পরিচালকদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হলে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই এনজিএসও স্যাটেলাইট সেবা পরিচালনার চূড়ান্ত নীতিমালা ও লাইসেন্সিং গাইডলাইন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে জমা দেওয়া হবে। তবে এনজিএসও অপারেটরদের বিএসসিএলের সঙ্গে অংশীদার করতে বাধ্য করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।
বিএসসিএলের জেনারেল ম্যানেজার ও হেড অফ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং শাহ আহমেদুল কবির বলেছেন, এনজিএসও অপারেটরদের স্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে এবং দেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত গেটওয়ে স্টেশনের মাধ্যমে তাদের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট রুট করতে হবে।
তবে টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসসিএলের বর্তমান গ্রাউন্ড স্টেশন মূলত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের জন্য নির্মিত, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার উপরে অবস্থান করে। অন্যদিকে এনজিএসও স্যাটেলাইটগুলো মাত্র ৫০০-২,০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কাজ করে। ফলে এসব স্যাটেলাইটের জন্য ভিন্ন অ্যান্টেনা ও ফ্রিকোয়েন্সি প্রয়োজন।
স্টারলিংক বাংলাদেশে প্রথম স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী কোম্পানি হতে পারে। যদিও বিটিআরসি আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টারলিংকের জনপ্রিয়তা মূলত খরচের ওপর নির্ভর করবে। স্টারলিংকের সেবা ব্যবহারের জন্য একজন ব্যবহারকারীকে ৫০০-৭০০ ডলার মূল্যের যন্ত্রপাতি কিনতে হতে পারে এবং প্রতি মাসে ১০০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটের জন্য প্রায় ১২০ ডলার খরচ হতে পারে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বা মোবাইল ইন্টারনেট এখনো পৌঁছায়নি, সেখানে স্টারলিংকের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতারা (আইএসপি) এই সংযোগ ব্যবহার করে একাধিক গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারে।
টেলিকম পলিসি বিশ্লেষক মোস্তাফা মাহমুদ হোসেন বলেন, "যদি সাশ্রয়ী মূল্যে ও ব্যবহারবান্ধব উপায়ে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে স্টারলিংক গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে। বিশেষ করে রিমোট শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গ্রামীণ ডিজিটাল অর্থনীতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।"
স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতারা (আইএসপি) স্যাটেলাইট ও নন-স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের জন্য সমান কর ও শুল্কসহ সমান সুযোগ পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রবেশ ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা কেমন হবে, তা মূলত নীতিমালা ও বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে।
