ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
বাংলাদেশে হ্রাস, বাড়তি বিদ্যুৎ শ্রীলঙ্কায় বেচতে চায় আদানি
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ পিএম
![বাংলাদেশে হ্রাস, বাড়তি বিদ্যুৎ শ্রীলঙ্কায় বেচতে চায় আদানি](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/24/20241224153052_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বকেয়া বিল বাড়তে থাকায় ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে আদানি পাওয়ার। ভারতের ওই কোম্পানির ঝাড়খণ্ডের গড্ডা কেন্দ্র থেকে আগে বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিক্রি করা হতো বর্তমানে তা কমিয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে তারা। বর্তমানে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট পুরোপুরি বসে থাকছে। উদ্বৃত্ত এ বিদ্যুৎ শ্রীলঙ্কার কাছে বিক্রি করতে চাইছে আদানি পাওয়ার। যদিও তা করতে গেলে বাংলাদেশের সম্মতি প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে এই প্রকল্পটি চাপের সম্মুখীন। তবে এই ধরনের প্রকল্প টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত সরকার গত আগস্টে দেশীয় বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি দেয় আদানিকে। এজন্য প্রয়োজনীয় আইনও পরিবর্তন করা হয়। তবে সেটি করতে গেলেও আদানিকে নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হবে। কারণ বর্তমানে ওই কেন্দ্রটির সঞ্চালন লাইনটি শুধু বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও শ্রীলঙ্কার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করার ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে কোনও বাধা থাকবে না। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে বাধা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এর জন্য বাংলাদেশের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে শুধু বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য ঝাড়খণ্ডে নির্মিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহারের জন্য আদানি পাওয়ার এখন সেই চেষ্টা করছে বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
গত রোববার দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের খবরে বলা হয়েছে, আদানি পাওয়ারকে এ চেষ্টায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ আদানি পাওয়ারের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার গড্ডা বিদ্যুৎকন্দ্রটি থেকে শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে চুক্তি করে আদানি পাওয়ার। উৎপাদন শুরুর পর ২৫ বছর এ কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ কেনার কথা বাংলাদেশের। যদিও চুক্তির বিভিন্ন ধারা এরই মধ্যে লঙ্ঘন করেছে কোম্পানিটি।
শ্রীলঙ্কার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির ক্ষেত্রে ভারত সরকার আদানির জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। বরং বাংলাদেশের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়াটাই তাদের জন্য কঠিন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে উদ্ধৃতি করে বিজনেস লাইন লিখেছে, ‘চুক্তি অনুযায়ী গড্ডার বিদ্যুৎ শুধু বাংলাদেশেই সরবরাহ করার কথা। আমার বিশ্বাস, এখন যদি আদানি তা শ্রীলঙ্কায় বিক্রি করতে চায়, তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।’
এ অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে কি না, তা ইমেইলের মাধ্যমে আদানি গ্রুপের কাছে জানতে চেয়েছিল বিজনেস লাইন। কিন্তু তারা কোনো সাড়া পায়নি। যদিও চুক্তিতে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে শেয়ার বিজকে জানান বিপিডিবির কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নির্মিত আইপিপির (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) মতো। শুধু এটি স্থাপন করা হয়েছে ভারতে। আদানির নিজস্ব কয়লা ব্যবহারের সুবিধার্থে এটি গড্ডায় নির্মাণ করা হয়েছিল।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বাংলাদেশের কাছে আদানির মোটা অঙ্কের বিল পাওনা রয়েছে, যা বাড়ছে। সর্বশেষ মার্চ পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আট মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। সময়মতো এ পাওনা না পেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি। এর আগে তারা কয়েক দফা চিঠিও দেয় বাংলাদেশকে। আদানি গ্রুপের একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে বিজনেস লাইনের খবরে বলা হয়, তারা এখন স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার মতো কোনো প্রতিবেশী দেশে গড্ডার বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চাইছে। ইন্ডিয়ান এনার্জি এক্সচেঞ্জের কাছেও বিদ্যুৎ বিক্রির চিন্তা রয়েছে তাদের। ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, ‘শ্রীলঙ্কায় বিক্রি করতে চাইলে ভারত সরকার কোনো বাধা নয়। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ঝাড়খণ্ডের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত।’
২০২৩ সালের জুলাই থেকে পূর্ণ সক্ষমতায় গড্ডা কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছর গত অর্থবছর আদানির কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে প্রায় ৮১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ কেনায় ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ১১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল পাঁচ হাজার ৮২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যদিও এ সময় কেন্দ্রটির সক্ষমতার ৬২ শতাংশ চলেছে।
![বাংলাদেশে হ্রাস, বাড়তি বিদ্যুৎ শ্রীলঙ্কায় বেচতে চায় আদানি](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)