ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৮:৩১:৪১ এএম

বাংলাদেশ অতীতের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে : অর্থ উপদেষ্টা

৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৩:৫ পিএম

বাংলাদেশ অতীতের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অতীতের দুর্নীতি এবং নীতিগত ভুল সিদ্ধান্ত। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখনো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের দুর্নীতির প্রভাব মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে এবং তাদের বাস্তবায়িত বিদেশি বিনিয়োগে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী নীতি-কৌশলের খেসারত দিচ্ছে।

 

তিনি এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ‘সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: প্রবণতা, মূল চ্যালেঞ্জ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায়।

 


ড. সালেহউদ্দিন বলেন, অতীতের দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে সৌদি আরবের আরামকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংসহ বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেনি। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, স্যামসাং বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখালেও নীতিগত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ভিয়েতনামে চলে গেছে।

 

“এগুলো ছিল নীতিগত ভুল সিদ্ধান্ত। এগুলো এখনই সংশোধন করা প্রয়োজন,” উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সহজ পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।

 


অর্থ উপদেষ্টা জানান, একটি সংক্ষিপ্ত সময়সীমায় অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। তিনি বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করলেও আমরা এমন একটি পরিচ্ছন্ন পথ রেখে যেতে চাই, যা অন্যদের জন্য অনুসরণযোগ্য হবে।”

 


ড. সালেহউদ্দিন বাংলাদেশের সৌদি আরবের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, "বর্তমানে আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, এবং এর আরও প্রবৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।"

 

 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বিভিন্ন উৎস থেকে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে এবং শিগগিরই আরও ৭০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার আশা রয়েছে। তবে, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তহবিল সংগ্রহের চেয়ে এর কার্যকর ব্যবহার ও পরিশোধ নিশ্চিত করা।

 


শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ড. সালেহউদ্দিন শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "কিছু কোম্পানির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের শেয়ারের দাম বাড়ছে। এটি বাজারের সচ্ছতার অভাবের প্রতিফলন। এই ধরনের অসঙ্গতিগুলো অবশ্যই নিরসন করা উচিত।"

 


এদিকে, সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান বাংলাদেশের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আরামকো বঙ্গোপসাগরে তেল শোধনাগার স্থাপনের জন্য বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, যদি চট্টগ্রাম ও জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে একটি সামুদ্রিক রুট স্থাপন করা যায়, তবে এটি বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

 


পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মানবসম্পদ খাতে দক্ষতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, "আমরা শুধু সৌদি আরবের জন্য নয়, অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারছি না। যত বেশি দক্ষ কর্মী তৈরি হবে, দেশের জন্য তত বেশি অবদান রাখতে পারবে।"

 


তিনি সৌদি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, "এখন যদি সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসেন, তারা একটি অনুকূল পরিবেশ পাবেন।"

 


বিদায়ী সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বলেন, ২০১৬-২০১৮ সালের মধ্যে আরামকো বাংলাদেশে তিনবার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠায়, কিন্তু সে সময় বিনিয়োগ গ্রহণ করা হয়নি। তবে, তিনি ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে এবং নতুন সুযোগ অনুসন্ধান করতে আহ্বান জানান।

 

 

এই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম, এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজও বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ অতীতের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে : অর্থ উপদেষ্টা