ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:১৩:৩০ পিএম

বাংলাদেশ-আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান

২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২:২৮ পিএম

বাংলাদেশ-আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান

ছবি: সংগ্রহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, চুক্তিতে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে তা পুনরায় আলোচনা করা হবে। তবে দুর্নীতি বা ঘুষের মতো গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে চুক্তি বাতিলেরও পরিকল্পনা রয়েছে।

 

 

চুক্তি পুনর্বিবেচনার বিষয়টি আদালতের নির্দেশিত তদন্তের ওপর নির্ভর করছে। চলতি মাসে এই তদন্ত শুরু হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এর মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপকে কর অব্যাহতি সুবিধা, চুক্তির শর্তাবলী, এবং বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তি জানানো হয়েছে।

 

 

গেল ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করছে। ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু হয় ২০২২ সালে। তবে, আদানির বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) গড় ক্রয়মূল্যের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

 

 

২০২২-২৩ অর্থবছরে আদানি গ্রুপ থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৪ টাকা ২ পয়সা দরে কেনা হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ১২ টাকায় নেমেছে। তবুও, ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদনকারী এবং রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় এটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল। জ্বালানি উপদেষ্টা জানান, উচ্চ মূল্যের কারণে সরকারকে প্রতি বছর ৩২০ বিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, যা কমানোর লক্ষ্যে চুক্তি পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ক্ষমতা বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট হলেও গ্যাস সংকট এবং অন্যান্য সমস্যায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল রয়েছে। আদানি গ্রুপ সম্প্রতি বকেয়া পরিশোধে বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে কমিয়ে দিয়েছিল। তবে এতে দেশের জ্বালানি ব্যবস্থায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

 

 

আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ এবং ভারতের একটি রাজ্যের বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও আদানি এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে, তবে ফ্রান্সের টোটাল এনার্জি ইতোমধ্যে তাদের বিনিয়োগ স্থগিত করেছে।

 

 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে আইন ও তদন্তের ওপর নির্ভর করছে। জনগণের স্বার্থে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে এই পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে ভারসাম্য আনতে চায় সরকার।

বাংলাদেশ-আদানি বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থান