ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:৩৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে জাচ্ছে
৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:৩৫ এএম
![বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে জাচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/04/20241104113550_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বাংলাদেশ ও ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব উপাদান এক কাঠামোতে আনতে চায়। সেই লক্ষ্যে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী একটি নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসছে উভয়পক্ষ। প্রথম দফার এই আলোচনায় সম্পর্কের একটি রোডম্যাপ এবং সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে।
আরও পড়ুন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছেন ইইউর এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপোলিনি। আগামী ৫ ও ৬ নভেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ-ইইউর প্রথম দফার পিসিএ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। পিসিএ চুক্তিতে বসার আগে সোমবার যৌথ কমিশনের বৈঠকে বসবে উভয়পক্ষ।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া ব্রাসেলস থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এই চুক্তির আইনি কাঠামো হবে মানবাধিকার-বিষয়ক। চুক্তিতে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, অন্তর্জাল নিরাপত্তা কাঠামোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার মতো উপাদান থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গেই প্রথম পিসিএ নিয়ে আলোচনা করছে ইইউ। বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান আলোচক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপোলিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইইউর সঙ্গে পিসিএ চুক্তি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ হবে এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে প্রথম রাষ্ট্র, যারা সবার আগে ইউরোপের ২৭ দেশের জোটের সঙ্গে এই চুক্তি সম্পাদন করবে। পিসিএ চুক্তি মূলত, দুই পক্ষের মধ্যে একটি আইনগত সমঝোতা। যার মাধ্যমে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু, ইন্দো-প্যাসিফিকসহ সম্পর্কের সব বিষয়ে সহযোগিতার জন্য চুক্তি করবে।
এই চুক্তি সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বাজার অনেক বড় হবে। পাশাপাশি ইউরোপের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে উৎপাদনমুখী কার্যক্রম নিতে উৎসাহ পাবে। এছাড়া, ইউরোপের বাজারের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের আরও একাধিক বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ নিতে পারবে।
ঢাকার এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের সম্পর্কের শুরুতে ইইউ ছিল বাংলাদেশের কাছে দাতাগোষ্ঠী । যা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। ২০০১ সালে ইইউর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তিতে অর্থনীতি, উন্নয়ন, সুশাসন কিংবা মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। সময়ের ব্যবধানে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। অবস্থান আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। সবাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
এ কূটনীতিক বলেন, এটি অনেক বড় ডকুমেন্ট এবং এর সঙ্গে সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও এজেন্সি জড়িত। ২০০১ সালে সহযোগিতা চুক্তিতে অনুচ্ছেদ ছিল ২১টি। অন্যদিকে খসড়া অংশীদারত্ব চুক্তিতে অনুচ্ছেদ আছে ৮৩টি। আকারে ও বিষয়বস্তুতে এটি অনেক বড় এবং প্রচুর উপাদান এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছি।
পিসিএ চুক্তিতে কোন উপাদানগুলো থাকছে— এমন প্রশ্নের জবাবে পেশাদার এ কূটনীতিক বলেন, পিসিএ-এর আওতায় সম্পর্কের সব উপাদান এক কাঠামোয় আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রথম দফার আলোচনায় সম্পর্কের একটি রোডম্যাপ এবং সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর বাইরে আইসিটি, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, লজিস্টিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কৃষি সহযোগিতাসহ অনেক বিষয় থাকবে।
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণ ও বিকাশের লক্ষ্যে গত বছরের ২৫ অক্টোবর নতুন করে ইইউ–বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ব্রাসেলসে ওই অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন উপস্থিত ছিলেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গত সেপ্টেম্বরে (২০২৪) অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির প্রথম দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির আলোচনা স্থগিত করে ইইউ।
পরবর্তীতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ। ব্রাসেলস থেকে ঢাকায় ওই খসড়া পাঠানো হয়।
![বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে জাচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)