ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৩৭:৪৬ পিএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে জনতা ব্যাংক

২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:৫৮ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে জনতা ব্যাংক

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৪ শতাংশ সুদে ৫ বছরের জন্য এই অর্থ ধার চাওয়া হয়েছে, যা ব্যাংকটির তারল্য পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়তা করবে।

 


জনতা ব্যাংক সম্প্রতি তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে গ্রাহকরা ব্যাপকভাবে টাকা তুলতে শুরু করেছেন। ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। অনেক গ্রাহক আমাদের কাছে টাকা তোলার জন্য আসছেন। ভবিষ্যতে টাকা তোলার চাপ আরও বাড়তে পারে, সেজন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এই ধার চেয়েছি।"

 

 

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, "আমরা এখনও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।"

 


এটা নতুন নয় যে, ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে হচ্ছে। সম্প্রতি বেসরকারি পদ্মা ব্যাংকও তারল্য সংকট কাটাতে ১,৩০০ কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছিল। এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক নভেম্বরে তারল্য সংকটে থাকা ন্যাশনাল, এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী এবং ইউনিয়ন ব্যাংককে মোট ২২,৫০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, তারা একদিকে যেমন টাকা ছাপানো হচ্ছে, তেমনি বাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

 


জনতা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বর্তমানে সংকটপূর্ণ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির মোট আমানত ছিল ১.১২ লাখ কোটি টাকা এবং ঋণ ৯৮,৫৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬০,৪৮৯ কোটি টাকা ঋণ ছিল খেলাপি, যা মোট ঋণের ৬১ শতাংশ। ব্যাংকটি ওই সময়ে ১,৫০৪ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে, ফলে তার মূলধন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩,৯২১ কোটি টাকায়।

 


জনতা ব্যাংকের ঋণ বিতরণের বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ব্যাংকটির ঋণের ৫৫ শতাংশ শীর্ষ ১০ শিল্প গ্রুপের কাছে কেন্দ্রীভূত। এসব গ্রাহক সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকের তারল্য সংকট আরও বাড়ছে। বর্তমানে ব্যাংকটি প্রতিদিন ১৮,০০০ থেকে ২০,০০০ কোটি টাকা ধার করে তার নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

 

জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সম্প্রতি সরকারের কাছে একটি চিঠি দিয়ে বলেছেন, "জনতা ব্যাংকের ইতিহাসে এমন নাজুক অবস্থা আর কখনো হয়নি। ব্যাংকটি এখন গভীর সংকটে নিমজ্জিত।" এক্ষেত্রে, ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে একটি বৈঠকেও ব্যাংকের দুর্বল পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।

 


জনতা ব্যাংকের বর্তমান আর্থিক সংকট এবং তারল্য সমস্যার সমাধান যথাযথভাবে করা না হলে, ব্যাংকটি তার কার্যক্রম চালাতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি সহায়তা প্রদান না করে, তবে ব্যাংকটির কার্যক্রমে আরও বিঘ্ন ঘটতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে জনতা ব্যাংক