ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ২:৩৯:৫৮ এএম

বিদেশে পণ্য পাঠাতে প্রতিবেশী দেশে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা, শাহজালালে কার্গো ব্যয় বেশি

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩০ পিএম

বিদেশে পণ্য পাঠাতে প্রতিবেশী দেশে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা, শাহজালালে কার্গো ব্যয় বেশি

ছবি: সংগ্রহ

সংকটে বাংলাদেশের আকাশ পথের কার্গো খাত। বিদেশে পণ্য পাঠাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার না করে প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহার বাড়ছে। ব্যয়ের ব্যবধান বেশি হওয়ায় রপ্তানিকারকরা দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং কলকাতার মতো ভারতীয় বিমানবন্দরগুলো বেছে নিচ্ছেন। এতে ঢাকার তুলনায় প্রতি কেজি ১ ডলার থেকে দেড় ডলার কম। কয়েক বছর আগেও কাতার ও ইতিহাদ শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ডেডিকেটেড ফ্লাইটে কার্গো পরিবহন করতো। এখন তারা সেটা কমিয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে কঠোর নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যেও শাহজালালের কার্গো কমপ্লেক্স থেকে পণ্য চুরি, অযত্নে ফেলে রাখা এবং পণ্যের মানের অবনতি হওয়া নিয়ে গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ আছে। 

 

দেশি ও বিদেশি ব্যবসায়ীদের অভিযোগে ২০২১ সালে বিমানবন্দরের কার্গো এভিয়েশন পরিদর্শন করার সময় এসব অনিয়ম দেখেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। এ সময় তিনি এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করেন এবং এক্সপ্লসিভ ডিডেক্টিভের (ইডিএস) স্ক্যানিং মেশিনের মেরামতের তাগিদ দেন।

 

গত মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮ হাজার টন পণ্য ভারতের বিমানবন্দর হয়ে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে এ ধরনের কার্গো ভারতে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চললে কার্গো বাজার দিল্লির হাতে চলে যেতে পারে। বর্তমানে ৪০০ টন রপ্তানিযোগ্য পণ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা থাকলেও সাধারণ সময়ে দৈনিক শিপমেন্ট গড়ে ৮০০ টন এবং ব্যস্ত সময়ে ১ হাজার ২০০ টনে পৌঁছে যায়। এতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ।


সংশ্লিষ্টদের মতে, পণ্য পাঠানোতেও হয়রানি পোহাতে হয়। কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা, দুর্নীতি-লুটপাট দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির গ্রেড উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল ছাড়াই কার্গো শাখার কাজ পরিচালনা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। অনিয়মের কারণে এয়ার কার্গো সিকিউরিটি এসিসি-৩ ও আরএ-৩ সনদ বন্ধ করে দেয়ারও নজির আছে।

 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরে বিলম্ব এবং অত্যধিক হ্যান্ডলিং ব্যয়ের কারণে দেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতাকে হ্রাস করছে এবং প্রতিবেশী ভারতকে উপকৃত করছে। উচ্চমূল্যের বাইরেও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা অভিযোগ করেছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের চারটি কার্গো স্ক্যানারের মধ্যে মাত্র দুটি সচল থাকে। এ ছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো হ্যান্ডলিং আরও বেশি মসৃণ করা এবং সেজন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন তারা। এসব বিষয় যদি সমাধান করা যায়, তাহলে প্রতিবেশী দেশ হয়ে কার্গো পাঠানোর প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন তারা।

 

এয়ার কার্গো সহজলভ্য করার দাবি এফবিসিসিআইয়ের: জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব তুলে ধরে এফবিসিসিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি বাড়াতে বিমান ভাড়া, কার্গো প্রাপ্তি, কাস্টমসসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। পাশাপাশি উপযুক্ত পলিসি এবং নির্ভুল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিমানবন্দরে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন স্ক্যানার (ইডিএস) মেশিনসহ কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিমানের ভাড়া বা ফ্রেইট কস্ট যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

 

বিজিএমইএ’র পরিচালক ও টিএডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, মাঝে মাঝে পোশাক ক্রেতারা কম লিড টাইম দিয়ে অর্ডার দেয়। তখন লিড টাইম ধরার জন্য বাড়তি খরচ করে এসব পণ্য এয়ারফ্রেইটের মাধ্যমে রপ্তানি করতে হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় ইইউ রুটের জন্য এয়ারফ্রেইটের হার কেজিতে ২.৪ ডলার থেকে বেড়ে ৫-৫.৫ ডলার হয়েছে।

 

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, দিল্লি বিমানবন্দর বর্তমানে এয়ার কার্গো ও যাত্রী, উভয় ধরনের ফ্লাইটের জন্য ঢাকা বিমানবন্দরের চেয়ে বেশি সাশ্রয়ী। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে নিউ জার্সি পর্যন্ত এয়ারফ্রেইটের খরচ দাঁড়ায় কেজিতে ৬ ডলার, যেখানে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৪ ডলার। একইভাবে ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত এয়ারফ্রেইটের খরচ কেজিতে ৮ ডলার, যেখানে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে এটি মাত্র ৫ ডলার।

বিদেশে পণ্য পাঠাতে প্রতিবেশী দেশে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা, শাহজালালে কার্গো ব্যয় বেশি