ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৮:৪৫:৪৪ এএম

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন লাগবে বিইআরসির

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:০ পিএম

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন লাগবে বিইআরসির

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনে যে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ এতদিন তা মানেনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ও মদদে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য জ্বালানির কোনো নির্ধারিত সংস্থান ছিল না। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে, যা বর্তমানে সরকারের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগে অনুমোদন নেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বিইআরসি।



বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, কমিশন এখন প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। কমিশন এতদিন শুধু বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা ট্যারিফ নির্ধারণ করে এসেছে। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদনের এখতিয়ারও বিইআরসির রয়েছে। তাই প্রকল্প গ্রহণের আগে বিইআরসির অনুমোদন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

বিইআরসির কর্মকর্তারা জানান, গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় সংস্থাটি গঠন করা হলেও রাজনৈতিক সরকারের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। বিইআরসির পরামর্শ ছাড়াই বিদ্যুৎ বিভাগ একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে অর্ধেকই রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২-এর মাধ্যমে বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের হাতে দেওয়া হয়।

 

এর পর নির্বাহী আদেশে একাধিকবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, যা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক গেজেটে এই অধ্যাদেশের ৩৪(ক) ধারা বিলুপ্ত করা হয়। ফলে এখন থেকে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হবে এবং বিইআরসি তার আগের ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে। নতুন গেজেট অনুসারে, এই আইন এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৪ নামে বর্ণিত হবে।

 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন বাড়াতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নতুন ১৫২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।

 

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে আইনের মাধ্যমে বিইআরসি গঠিত হলেও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালে প্রথম বিদ্যুতের দর সমন্বয় করা হয়। এরপর থেকে ৯ দফায় পাইকারি, ১০ দফায় খুচরা পর্যায়ে এবং ২ দফায় সঞ্চালন খরচ সমন্বয় করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০০৯ সালে প্রথমবার দেওয়ার এ পর্যন্ত ৯ দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

 

এ ছাড়া বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রাপ্ত ৬৭৭ অভিযোগের মধ্যে ৫৪৪টির সমাধান দিয়েছে। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ভোক্তার পক্ষ থেকে ২৩৯ অভিযোগের মধ্যে ২৩২টি (৯৭.০৭ শতাংশ) নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন লাগবে বিইআরসির