ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৩:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমায় ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ৫১,৬৯৬ কোটি টাকা
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৩:০ পিএম

ছবি: সংগ্রহ
গত বছর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাপক কমেছে; ফলে ব্যাংকগুলোর এক বছরে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ৫১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে সিকিউরিটিজসহ ব্যাংকিং খাতের মোট অতিরিক্ত তরল সম্পদ দাঁড়িয়েছে ২.১৫ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৩-এর ডিসেম্বরে ছিল ১.৬৩ লাখ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তরল সম্পদ বাড়লেও অতিরিক্ত নগদ ২ হাজার ২৯১ কোটি টাকা কমে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তরল সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। তবে গত ছয় মাসে এই অঙ্ক বেড়েছে।
প্রয়োজনীয়তা স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) ও ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বজায় রাখার পরে অতিরিক্ত তারল্য হিসাব করা হয়।
ব্যাংকগুলিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট আমানতের ৪ শতাংশ সিআরআর নগদ আকারে এবং ১৩ শতাংশ এসএলআর নগদ আকারে জমা রাখতে হয়।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য বাড়ার কারণে হচ্ছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ খুবই কম।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত তারল্য হচ্ছে ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের যে অংশ সিআরআর ও এসএলআর বাবদ সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ রাখতে হয়।
এই সময়ে ব্যাংকগুলো দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বেশি করেছে। এ কারণে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন,'২০২৪-এর ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২৭ শতাংশ, যা এক বছর আগে ১০ শতাংশের বেশি ছিল। যদিও ব্যাংকগুলোতে একটি নির্ধারিত পরিমাণ নতুন মানি ক্রিয়েট হয়েছে। সেই অর্থগুলো বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের তুলনায় সরকারি সিকিউরিটিজে হয়েছে। এর ফলে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া, নতুন বিনিয়োগের অভাব এবং সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়ার কারণে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা নভেম্বরের তুলনায় ৩৮ বেসিস পয়েন্ট কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৭.৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অক্টোবরের তুলনায় ৬৬ বেসিস পয়েন্ট কম এবং ২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন। জুলাই থেকে ধীরে ধীরে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমা অব্যাহত রয়েছে। জুলাইয়ে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৩ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, চলতি অর্থবছরে দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতি মেশিনারিজ আমদানি অনেক কমেছে, কারণ দেশে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়েনি। এ কারণে ব্যাংকগুলো তাদের অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে ডলারের প্রবাহ ভালো। ব্যাংকগুলো ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি মোটামুটি ভালো করছে।
তবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক না হলে, এবং নির্বাচনের আগে বড় আকারে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেন এই ব্যাংকার। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে নতুন বিনিয়োগ কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ বেড়ে ৩৪.৮৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩.৪৯ বিলিয়ন ডলার।
তবে এই সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৭.৬৬ শতাংশ।
