ঢাকা রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫ - ১২:৪২:৩৮ এএম

বোর্ড গঠনের তিনগুণ সময়ের পরও চূড়ান্ত হয় না মজুরি

২৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:৪৬ এএম

বোর্ড গঠনের তিনগুণ সময়ের পরও চূড়ান্ত হয় না মজুরি

ছবি: সংগ্রহ

গবেষণায় দেখা যায়, মজুরি বোর্ড গঠনের পর ৬ মাসের মধ্যে মজুরির ঘোষণা আসার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময় কিংবা তারও বেশি সময় লেগে যায়। এ ক্ষেত্রে বোর্ডের সদস্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কী ধরনের নীতি রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া বোর্ডের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সদস্যদের যোগ্যতা ও তাদের ভূমিকা নির্ধারণ, মজুরি হিসাবের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মান নির্ধারণ ও সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

 

মন্ডিয়াল এফএনভির সহযোগিতায় বিলসের উদ্যোগে সম্প্রতি সমাপ্ত ‘বাংলাদেশে নিম্নতম মজুরি : প্রয়োগ ও কার্যকারিতার সন্ধানে’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি সম্মেলন কেন্দ্রে এই গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়।

 

মূলত চারটি সেক্টরের মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে ভিত্তি ধরে এ গবেষণা কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা হয়। গবেষণার বিবেচিত চারটি সেক্টর হচ্ছে-তৈরি পোশাক খাত, চা, ট্যানারি এবং চিংড়ি খাত। গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল তৈরি পোশাক, চা, ট্যানারি এবং চিংড়ি খাতের মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কাঠামো, মজুরি নির্ধারণ প্রক্রিয়া, কৌশল এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের যথাযথ কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ট্রেড ইউনিয়ন এবং সংশ্লিষ্ট অন্য স্টেকহোল্ডারদের প্রধান ভূমিকা চিহ্নিতকরণ, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের যথাযথ কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়ন করা।

 

এ সময় বক্তারা বলেন, শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার দোহাই দিয়ে ন্যায্য মজুরি থেকে শ্রমিককে বঞ্চিত করা যাবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মালিক-শ্রমিকের অংশগ্রহণের সমতাকে বিবেচনায় রেখে জীবন ধারণের মতো মজুরি নির্ধারণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এনামুল হক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের আইন কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ, আইএলওর প্রকল্প কর্মকর্তা নিরান রামজুঠান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিলস নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজ আহমেদ।

 

বক্তারা বলেন, শ্রমিককে বঞ্চিত করার মনোভাব কাটিয়ে তাদের জীবনমান ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, বাজার পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে। ঠিকাদারি ব্যবস্থার কারণে মজুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শ্রমিকের যে হয়রানি হয় তার অবসান ঘটাতে হবে।

 

তারা বলেন, সমীক্ষার মাধ্যমে শ্রমিকদের চাহিদা নিরূপণ করে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডকে মজুরি নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন সঠিকভাব হচ্ছে কি না তা মজুরি বোর্ড পরিবীক্ষণ করলে সেটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তারা আশা করেন। এ ছাড়া মজুরি বোর্ডকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তারা বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর মজুরি বোর্ড গঠন না করে বরং তা প্রতি তিন বছর পর গঠন করলে সেটি সময়োপযোগী ও অধিক কার্যকরী হবে। এ ছাড়া বোর্ডের গঠন ও কার্যক্রমের সঙ্গে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। বক্তারা বলেন, তবে মালিকের সাধ্য এবং শ্রমিকের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে আইনগত ও যুক্তিসংগতভাবে মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। মজুরি বোর্ডে ভারসাম্যমূলক প্রতিনিধিত্ব এবং সদস্যদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা দরকার।

 

বক্তারা বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য ও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কারণে পূর্বের মজুরিতে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। মজুরি নির্ধারণে এ বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। এ ছাড়া বোর্ডের মানসম্পন্ন পরিচালনা পদ্ধতিও নির্ধারণ করা দরকার এবং সেক্টরের সংখ্যা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমানে মোট ৫৬টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং এটির পরিবীক্ষণে পরিদর্শন অধিদফতরের দায়িত্ব রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে উল্লেখ করে জানানো হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

 

নিম্নতম মজুরিী বোর্ডের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বোর্ডের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রেখেই মজুরি বোর্ডকে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন, শ্রমিক পক্ষ তাদের অধিকারের কথা মালিক পক্ষের মতো জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারেন না-এ কথা মালিক পক্ষকে বিবেচনায় রেখে তাদের শ্রমিকবান্ধব হতে হবে।

বোর্ড গঠনের তিনগুণ সময়ের পরও চূড়ান্ত হয় না মজুরি