ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৫:১২:২৮ পিএম

ব্যবসাবান্ধব না থাকলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা খাবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

১৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:৮ এএম

ব্যবসাবান্ধব না থাকলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা খাবে :  বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি: সংগ্রহ

কেমন আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? বাজারে স্বস্তি ফেরাতে কী করছে অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে মানুষ কতটা স্বস্তিতে আছে—এই বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি একই সঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

 

সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি টাকার অবয়বগত পরিমাণ ও মূল্যমানের মধ্যে একটা বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময় হার ও সুদের হার গুরুত্বহীনভাবে ও অন্যায়ভাবে একটা ব্যবস্থাপনার মধ্যে ছিল।


বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আর্থিক খাতে অন্যায্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল। টাকা ছাপিয়ে সেই টাকা পাচার করে অর্থনীতিতে সমুদ্র সমান গর্ত তৈরি করা হয়েছিল।

 

নিত্যপণ্যের বাজারে সাধারণ মানুষের স্বস্তি ফেরাতে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি, সুদের হার ও মুদ্রার বিনিময় হার—এটা একজন সাধারণ ভোক্তার কাছে মূল্যহীন।

 

তার কাছে বড় হচ্ছে জীবনধারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে তাকে কোথায় কোথায় ছাড় দিতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য ক্রয়ক্ষমতার নাগালে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে পুরো উপদেষ্টা পরিষদ সমবেদনশীল।

 

তাঁকে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলন বা উদ্দেশ্য নিয়ে আমার কোনো ধরনের দ্বিমত নেই। আর যদি কেউ পতিত স্বৈরাচারের দোসর হয়, তবে এ ধরনের অবস্থানে আসার তার নৈতিক অবস্থান থাকার কথা নয়। আর আমাকে নিয়ে যে বিষয়ের অবতারণা করা হচ্ছে তা কতটা ঠিক, এটা আমার বলা ঠিক হবে না।’

 

তিনি বলেন, ‘সাদা ও কালো—এভাবে চিহ্নিত করে সমাজকে আমরা অনেক বেশি বিভক্ত করে ফেলেছি। এ ছাড়া আমি স্বৈচারের দোসর ছিলাম কি ছিলাম না—এটা বের করা খুব সহজ কাজ।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাকে কালোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে আমার প্রতি জুলুম করা হচ্ছে। অনেকটা গরুকে নদীতে ফেলে নদীর রচনা লেখার মতো।’


নিজের ভাই সেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমত তিনি আমার বড় ভাই। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তিনি আগের সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন। সরকার পতনের কত দিন আগে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আমি স্পষ্ট করে বলতে পারব না। অনেক দিন তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তবে তিনি আমার ভাই। এটা তো অস্বীকার করতে পারি না। ভাই হিসেবে যত ভালোবাসা, তাঁর প্রতি সেটা আমার আছে। কিন্তু তাঁর দর্শনের সঙ্গে তো আমাদের পার্থক্য আছে। নিজেদের চিন্তার পার্থক্যের কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আলাদা হয়েছে। ফলে এ ধরনের বৈচিত্র্য আমাদের সবার গ্রহণ করা উচিত।’

 

বাজারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট থেকে বের হওয়ার উপায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সিন্ডিকেট হয়েছে। একত্রিত হয়েছে এ ধরনের বাণিজ্যের বড় একটা অংশ। এর ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দিন দিন কমেছে। এ জন্য আমাদের সমস্যার সঠিক রূপ চিহ্নিত করে মানুষের স্বস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর একটিমাত্র রাস্তা হলো—অনেক বেশি মানুষকে বাণিজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা।’

 


তিনি বলেন, ‘আমরা যে পরিবর্তন চাই সেসব নিয়ামক হলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সুশাসন নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুঃশাসনকে আরো জটিল করে তুলতে হবে। তবে দুঃশাসন ফিরে আসবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বিচারালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এমনকি জাতীয় মসজিদের খতিব পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই আমাদের আগামীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নিয়ামকগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য আমাদের সন্তানদের অনুশাসন-শাসন এবং আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তুলতে হবে।’

 

ভিয়েতনামের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশটির বৈদেশিক বিনিয়োগ জিডিপির ৮০ শতাংশ রপ্তানি, সেখানে আমাদের মাত্র ১২ শতাংশ। আর আমাদের দেশে কিছুটা প্রবাস আয় এলেও প্রকৃত রপ্তানি আয় যথেষ্ট নয়।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বে বাণিজ্যের একজন ব্র্যান্ড। বিশ্বনেতারা তাঁকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখেন। আমরা এটাকে কাজে লাগাতে চাই। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণে তাঁর ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাতে চাই।’

ব্যবসাবান্ধব না থাকলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা খাবে :  বাণিজ্য উপদেষ্টা