ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৪৪:৫১ পিএম

ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ অর্থ মামলায় আটকা

২৭ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:১১ এএম

ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ অর্থ মামলায় আটকা

ছবি: সংগ্রহীত

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন ৬৭ হাজার ৫১৯টি মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ৯ হাজার ৬৯১ কোটি ৪ লাখ টাকা। পাশাপাশি উচ্চ আদালতের স্থিতাদেশের (স্টে অর্ডার) কারণে আটকে রয়েছে আরও প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে মামলার কারণে আটকে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ।

 


কয়েক জন ব্যাংকার জানিয়েছেন, ব্যাংকের বড় বড় গ্রাহক প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেন না। ব্যাংকঋণের টাকা ফেরত চাইলে তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিতেন। তখন ব্যাংকও নিরুপায় হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতো। মূলত ২০১৮ সালের পর এ ঝোঁকটা বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অর্থঋণ আদালতে ৫৭ হাজার মামলায় আটকে থাকা অর্থ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ছয় বছরের ব্যবধানে মামলায় আটকে থাকা ঋণের পরিমাণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

 

 


বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন ৬৭ হাজার ৫১৯টি মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ৯ হাজার ৬৯১ কোটি ৪ লাখ টাকা। তার আগে ২০২৩ সালের একই সময়ে বিচারাধীন মামলা ছিল ৭২ হাজার ৫৪০টি। এসব মামলায় ঝুলে ছিল প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ। ২০২২ সালের জুনে বিচারাধীন মামলা ছিল ৬৯ হাজার ৩৬৯টি। এসব মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালের জুনে বিচারাধীন মামলা ছিল ৬৫ হাজার ৪৩৭টি এবং আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় জড়িত অর্থের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ২১২ কোটি টাকা। আর নিষ্পত্তি হওয়া অর্থের অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া মামলার বিপরীতে মাত্র ২৩ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

 

 


বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। আর অর্থঋণ আদালতের যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করা হবে। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অর্থঋণ আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিটের শুনানির ওপর স্থিতাদেশের (স্টে অর্ডার) কারণেও আটকে রয়েছে বড় অঙ্কের ঋণ। গত জুন পর্যন্ত স্টে অর্ডারে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ অন্তত ৭৬ হাজার কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৩ হাজার কোটি টাকা।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পুনঃ তপসিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর শেষে পুনঃ তপসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। পাশাপাশি আদায় অযোগ্য অপ্রদর্শিত অবলোপনকৃত ঋণ ৭১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে আদায় অযোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা। আর গত জুন পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৬৪ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ অর্থ মামলায় আটকা