ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:৫৬:৫৬ পিএম

ব্যাংকে গড়াচ্ছে সঞ্চয়পত্রের টাকা

২০ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:১৭ এএম

ব্যাংকে গড়াচ্ছে সঞ্চয়পত্রের টাকা

ছবি: সংগ্রহ

নানা কড়াকড়ি আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গেল অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মানুষ। ফলে পুরো অর্থবছরে বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা ছিল বেশি। তবে চলতি অর্থবছরে এ খাতে বিনিয়োগে উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আগের মাস জুলাইতে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সব মিলে দুই মাসে নিট বিনিয়োগ ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

 

তবে একই সময়ে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ব্যাংকগুলোয় আমানত কমেছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এর প্রভাবে আগস্ট শেষে বার্ষিক আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থা সংকটে দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এখনো আমানত তুলে নেওয়ার প্রবণতা অব্যহত আছে। সেই আমানতের একটা অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হিসেবে আসছে। আবার সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতাও কমেছে। সব মিলে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ সরকারের ঋণ হিসেবে গণ্য হয়। এটা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার করে সরকার। নিম্ন মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রে তুলনামূলক বেশি মুনাফা (সুদ) দেয় সরকার। বর্তমানে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

 

এ ছাড়া পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। অনদিকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর ব্যাংককে ঋণের সুদহারের পাশাপাশি আমানতের সুদহার বেশ বেড়েছে। বর্তমানে কোনো কোনো ব্যাংকে আমানতের সুদের হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

 

এদিকে ব্যাংকে আমানতের সুদ বাড়ায় সঞ্চয়পত্রের সুদহারও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এখন থেকে সঞ্চয়পত্রের মেয়াদপূর্তির দিনই মুনাফাসহ আসল টাকা গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে জমা করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডসহ সঞ্চয় অধিদপ্তর পরিচালিত ১১টি সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগগুলো মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। এসব পদক্ষেপের ফলে আগামীতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ার আশা করা হচ্ছে।

 

 সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে মাত্র ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ২৪ কোটি টাকা। একই সময়ে আগের কেনা সঞ্চয়পত্র ভাঙানো বাবদ আসল পরিশোধ হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফলে নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি ধারাবাহিক কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। উল্টো পুরো অর্থবছরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়েছিল প্রায় ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম দুই প্রায় ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়েছিল। আর অর্থবছরের শেষ দুই মাসে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মকের পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ৬ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

 

 বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সর্বশেষ গত আগস্ট মাস শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা গত জুনে ছিল ১৭ লাখ ২০ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে প্রায় ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগস্ট মাসে কমে ২ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা। আর জুলাই মাসে কমে ৮ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর ফলে বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। গত আগস্টে বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ০২ শতাংশ, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অথচ কয়েক মাস আগে এ খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ।

 

এর আগে দেশে করোনার আঘাত আসার মধ্যেও আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১৪ দশনিক ৪৭ শতাংশে উঠেছিল। কিন্তু তারপর থেকে টানা কমতে থাকে আমানতের প্রবৃদ্ধি। গত বছরের ডিসেম্বরে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশে, যা ছিল ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। এ ছাড়া গত কয়েক মাস ধরে মানুষের হাতে নগদ অর্থ ধরে রাখার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আলোচ্য দুই মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকে গড়াচ্ছে সঞ্চয়পত্রের টাকা