ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১২:০৫:২১ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৩:১৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ব্যাগেজ রুলসে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৩:১৭ পিএম

ব্যাগেজ রুলসে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম

ছবি: সংগ্রহ

দেশে আকাশ ও নৌপথে আসা অপর্যটক যাত্রীদের ব্যাগেজ রুলস সুবিধার আওতায় সোনা, মোবাইল ফোনসহ ২৬টি পণ্য শুল্ক এবং কর মুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে আনার সুযোগ দেয় সরকার। এই সুবিধার অপব্যবহারের ফলে ব্যবসার সর্বনাশ হওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

তারা ব্যাগেজ রুলস সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে বলছেন, এ সুবিধা বহাল রেখে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেট সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। দেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচারের মহোৎসব চলছে।

 

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাজুসের দাবি, বছরে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সোনা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে। এমন ২৬টি পণ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চোরাচালানের ভয়ংকর সিন্ডিকেট দেশে আনছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, হুন্ডির সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত। এ চক্রের সঙ্গে আছে দেশি চোরাকারবারিরা।

 

এদের ধরতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) সক্রিয় হতে হবে। দেশীয় চক্রকে ধরা বিএফআইইর পক্ষে কঠিন না। চোরাচালানের পণ্য কীভাবে আসে সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।

 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের  চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের বেশির ভাগ অর্থই হুন্ডিতে আসে। হুন্ডি বন্ধে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর বাড়াতে হবে।

 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাগেজ রুলস বিধিমালা অনুযায়ী-১২ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সি একজন যাত্রী ৬৫ কেজির ব্যাগেজ শুল্ক কর ছাড়া খালাস করতে পারবেন। তবে ১২ বছরের কম বয়সির জন্য এই সুবিধা ৪০ কেজি পর্যন্ত। এই সুবিধার আওতায় শুল্ক কর ছাড়া ২৬ ধরনের পণ্য আনার সুযোগ রয়েছে

 

শুল্ক কর মুক্ত সুবিধার ২৬টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার অলংকার ও ২০০ গ্রাম ওজনের রুপার অলংকার, দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন, ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ, কম্পিউটার স্ক্যানার, প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন, ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৯ ইঞ্চি পর্যন্ত এলসিডি মনিটর, ওভেন, রাইস কুকার, সেলাই মেশিন, সিলিং ফ্যান, এক কার্টন সিগারেট ইত্যাদি। অপরদিকে ব্যাগেজ রুলস বিধিমালা অনুযায়ী- শুল্ক কর পরিশোধ করে ১২টি পণ্য আনতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে ১১৭ গ্রাম ওজনের সোনার বার। এ জন্য ৪০ হাজার টাকা শুল্ক কর দিতে হবে।

 

এ ছাড়া ২০ তোলা রৌপ্যবার, ৩০ ইঞ্চি ও তদূর্ধ্ব টেলিভিশন, একটি নতুন মুঠোফোন, হোম থিয়েটার, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, ডিশ অ্যানটেনা, ক্যামেরা, ঝাড়বাতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এয়ার গান ও ডিশওয়াসার বা ওয়াশিং মেশিন বা ক্লথ ড্রায়ার আনা যাবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ- ব্যাগেজ রুলস সুবিধায় ২৬ ধরনের পণ্য আনার ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা কেবল মাত্র বাহকের ভূমিকা পালন করেন।

 

বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এসব যাত্রীর সঙ্গে থাকা লাগেজ ভর্তি পণ্য তুলে দেন চোরাকারবারিদের হাতে। এতেই প্রতিবছর দেশ হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুসের মুখপাত্র ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হুন্ডি বন্ধ করতে হলে সোনা চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে হবে সরকারকে। ব্যা

 

সর্বশেষ গত ৩ জুন সোনা ও হীরা চোরাচালানে বছরে ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পাচার হওয়ার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বাজুস বলেছে- পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত অবস্থিত। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ৬টি মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে। সোনার বড় একটি অংশ এ সব জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়ে থাকে।

 

বাজুসের প্রাথমিক ধারণা- প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার, সোনার বার, ব্যবহৃত পুরনো জুয়েলারি ও হীরার অলংকার  চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে, যা ৩৬৫ দিন বা এক বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা তার অধিক।

 

এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২২০ কোটি টাকার সোনা ও সোনার অলংকার এবং ৩০ কোটি টাকার হীরা ও হীরার অলংকার বাংলাদেশে আসছে। সে হিসাবে ৩৬৫ দিন বা এক বছরে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সোনা ও ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার হীরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে।

 

এই পুরো টাকাটাই হুন্ডির মাধ্যমে সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা বিদেশে পাচার করে থাকে। যার ফলে সরকার রেমিট্যান্স হারাচ্ছে এবং সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা তাদের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে। দেশে চলমান ডলার সংকটে এই প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার অর্থ পাচার ও চোরাচালান বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

 

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশেরতথ্য বলছে- চাহিদার প্রায় শতভাগ ফোনই এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু অবৈধভাবে ফোন আমদানি বন্ধ না হওয়ায় বাজারের ৩৫-৪০ শতাংশ এখন চোরাই ফোনের দখলে। দেশে ১৬ হাজার কোটি টাকার মোবাইল ফোন বাজারের ৪০ শতাংশই অবৈধ হ্যান্ডসেটের দখলে। ফলে কমছে উৎপাদন। বর্তমানে দেশে স্মার্ট ফোন তৈরির সক্ষমতা প্রতি মাসে ১৫ লাখ।

 

প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য ১৫ সংখ্যার একটি স্বতন্ত্র আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টি) নম্বর থাকে। এ প্রসঙ্গে একটি মোবাইল অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তা গত জুনে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা একটি আইএমইআই নম্বরের নিবন্ধন দিয়েই দেড় লাখের বেশি মোবাইল ফোনের খোঁজ পেয়েছেন। অর্থাৎ এসব ফোনই নকল।

 

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অবৈধ মোবাইল দেদার বিক্রি হচ্ছে। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েও কপি ফোন বিক্রি হচ্ছে। স্যামসাংয়ের শোরুমে দেশি উৎপাদিত যে ফোন সেটের দাম ২৩ হাজার টাকা, পাশের দোকানে একই মডেলের বিদেশি সেট বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।

 

রাজধানীসহ দেশের জেলা-উপজেলা, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মিলছে অবৈধভাবে আমদানি করা বিদেশি সিগারেট। এসব সিগারেট দেশের উচ্চস্তরের সিগারেটের চেয়ে বেশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। চলতি বছর ২০২৪ সালের এপ্রিলে মন্ত্রিপরিষদকে দেওয়া চিঠিতে এভাবেই অবৈধভাবে আমদানি করা বিদেশি সিগারেটের বিষয়টি তুলে ধরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

 

চিঠিতে ওরিস, মন্ড, ডানহিল, ট্রিপল ফাইভ, ইজি এসব সিগারেটের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, গত এক বছরে বিদেশি কোনো সিগারেট বৈধভাবে আমদানি করা হয়নি। অথচ ঢাকা মহানগরসহ সব জেলা, উপজেলা, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারেও অবৈধভাবে আমদানি করা বিদেশি সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে।

ব্যাগেজ রুলসে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম