ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৮:০৬:৩০ পিএম

বড় অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ খাত

২০ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:২৭ এএম

বড় অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ খাত

ছবি: সংগ্রহ

দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সবচেয়ে বড় সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং এর আওতাধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর (পবিস) বিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ খাতে অস্থিরতার কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন ৮০টি পবিসের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক।

 

আরইবি এবং পবিসগুলোকে একীভূত করাসহ বেশ কিছু দাবিতে কয়েক মাস ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন পবিসগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ। এর মধ্যেই আন্দোলনরত কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পায় আরইবি। প্রাথমিক তদন্তে সেগুলোর প্রমাণ পেয়েছে বলেও জানিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আন্দোলনরতরা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতাদের ইন্ধনে ও সহযোগিতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায় বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।

 

শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দুর্নীতির অভিযোগে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ২৪ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে আরইবি। আটক করা হয় কয়েকজনকে। চাকরিচ্যুতদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে ওই দিনই ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন’ নামে বিক্ষুব্ধদের প্ল্যাটফর্মটি। দাবি আদায় না হলে ‘কমপ্লিট শাটডান’ বা বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ করার ঘোষণা দেন তারা। তবে সময়সীমা পার হওয়ার আগেই একে একে প্রায় ৬১টি পবিস বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে। এর ফলে ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুত্হীন ছিলেন বিভিন্ন এলাকার কয়েক কোটি মানুষ। পবিসের আন্দোলনরতদের পাশাপাশি ওইদিন হার্ডলাইনে যেতে দেখা যায় আরইবি, পুলিশ এবং যৌথবাহিনীর সদস্যদেরকে।

 

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের প্রতিনিধি এবং চট্টগ্রাম পবিস-১ এর এজিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন ও পবিস ঢাকা-১ এর প্রকৌশলী মো. তামজীদুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, আজ রবিবার সকাল ১১টায় রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবেন।

 

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান  জানান, আন্দোলনরদের সঙ্গে আলোচনা বা বৈঠকের বিষয়ে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, “তাদের দাবি-দাওয়া যেগুলো তাত্ক্ষনিকভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব সেগুলো আরইবি মেনে নিয়েছে। বাকি দাবি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আবার সব দাবি বাস্তবায়নযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ বা শাটডাউনের কর্মসূচি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আরইবি। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

 

গতকাল বিকালে ইউনিটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা বা শাটডাউনের জন্য দু:খ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরতরা। একই সাথে সরকারের প্রতি চার দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা। দাবিগুলো হলো- আরইবি কর্তৃক সৃষ্ট অস্থিতিশীল পল্লী বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে ২৪ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও স্ট্যান্ড রিলিজ এবং সংযুক্ত ২ জনকে পদায়ন করা; গ্রাহকের নিকট জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য সমিতি ও বোর্ড সংস্কার করে একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠান করা ও স্থায়ী পদের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিকদের নিয়মিত করা; ছাত্র সমন্বয়কসহ স্বাধীন কমিশন গঠন করে সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা এবং আরইবির দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনা।

 

শত কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারসহ ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে দুদক থেকে তাদের কাছে তলবি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে তাদের আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।

 

এদের মধ্যে প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর ও আসাদুজ্জামান ভূইয়াকে ২৭ অক্টোবর এবং সামিউল কবীর ও বিপাশা ইসলাম এবং রাজন কুমার দাসকে ২৮ অক্টোবর দুদকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

 

দুদক সূত্রে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুতের একজন ঠিকাদারের কাজ শেষে ঘুষ না দেওয়ায় বিল থেকে জরিমানা হিসেবে টাকা কেটে রাখাসহ একাধিক দুর্নীতির বিষয় নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ে। যা পল্লী বিদ্যুৎ থেকেও প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলে। এরপর যা দুদকে পাঠানো হলে যাচাই বাছাই শেষে তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

 

এছাড়া অপর আর একটি অভিযোগে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতের সমন্বয়কদের মাধ্যমে ২২৫ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীর থেকে এই অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। ওই টাকা ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। দলের অন্য দুই সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও উপসহকারী পরিচালক মো. শাহজালাল।

 

গত তিন দিনে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১৫ জনকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। বাকিরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক রয়েছেন। গ্রেপ্তার ও আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে- মুন্সীগঞ্জ পবিসের এজিএম রাজন কুমার দাস, ব্রাহ্মনবাড়িয়া পবিসের ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া। আরও রয়েছেন- আরিফ, রাহাত, বেলাল হোসেন, এস এক শাকিল আহমেদ, দিপক কুমার সিংহ, ফয়সাল চৌধুরী, তানভীর আহমেদ, সাগর আহমেদ, নুর আহমদ ও শহীদুল ইসলাম।

বড় অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ খাত