ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৩:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ভারতীয় ভিসা সংকটে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে
২০২৪ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ভারত সফরকারী বাংলাদেশির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে গেছে। অবকাশ ও চিকিৎসা পর্যটনের ক্ষেত্রে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষ
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৩:১৩ পিএম
![ভারতীয় ভিসা সংকটে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/02/12/20250212151345_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পর্যটকদের বিকল্প গন্তব্য বেছে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষত নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১২১ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯ হাজার ৫৫৫-এ পৌঁছেছে। মালদ্বীপে এই সংখ্যা ৫২ দশমিক ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২৯৫-এ, আর নেপালে বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশি পর্যটকেরা বিকল্প গন্তব্য বেছে নিচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট থেকে ভারতীয় হাইকমিশন সীমিত পরিসরে মূলত চিকিৎসা ও শিক্ষাখাতে ভিসা দিচ্ছে।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ভারত সফরকারী বাংলাদেশির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে গেছে।
সম্প্রতি ভারত ছাড়াও ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এসব দেশ মূলত ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশিদের অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অভিযোগ তুলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিকল্প গন্তব্যে পর্যটন বৃদ্ধির প্রবণতা
ভারতীয় ভিসা সংকটের কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে অবকাশ ও চিকিৎসা পর্যটনের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।
এছাড়া, চিকিৎসা সেবার জন্য থাইল্যান্ডেও বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বাড়ছে, তবে জটিল ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও, পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে দেশটিতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বাড়ছে।
পাকিস্তানের সাথে খুব শিগগিরই সরাসরি বিমান যোগাযোগও পুনরায় চালু হতে পারে। সম্প্রতি পাকিস্তানের জিন্নাহ এয়ার বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে।
আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের সভাপতি চৌধুরী হাসানুজ্জামান রনি এক সাক্ষাৎকারে টিবিএসকে বলেন, 'রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর থেকে অবকাশ পর্যটনের ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি ব্যস্ত মৌসুম। এর ফলে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় পর্যটকরা বিকল্প গন্তব্য বেছে নিচ্ছেন। অনেকেই ইউরোপীয় ভিসা পাওয়ার জন্য ভারত বাদ দিয়ে নেপালকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছেন'।
হিমালয়সংলগ্ন দেশ নেপাল গত কয়েক বছরে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। গত তিন বছরে দেশটিতে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেপাল পর্যটন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে ৪৮ হাজার ৮৪৮ বাংলাদেশি পর্যটক গেছেন, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের বেশি, যা মহামারিপূর্ব অবস্থার কাছাকাছি।
এক বাংলাদেশি পর্যটক জানিয়েছেন, তিনি তার জীবনে অন্তত ৫০ বার নেপাল ভ্রমণ করেছেন এবং দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে মনে করেন।
নেপাল বাংলাদেশিদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান করায় এবং ঢাকাসহ সিলেট, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসা কার্যক্রম সীমিত থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকরা নেপালের দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য। তিনি জানান, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সময়টাতে দেশটিতে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে।
নেপালে পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে ভারত শীর্ষে রয়েছে (৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ), এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ), চীন (৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৫ দশমিক ২০ শতাংশ), অস্ট্রেলিয়া (৩ দশমিক ৮২ শতাংশ) এবং বাংলাদেশ (৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ)।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নেপাল ১০ লাখ পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যার প্রধান কারণ চীনের সীমান্ত পুনরায় খুলে দেওয়া এবং ভারত থেকে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের আগমন।
শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপেও যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা
শ্রীলঙ্কায়ও বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে ৩৯ হাজার ৫৫৫ বাংলাদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ১২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। এর ফলে বাংলাদেশ এখন শ্রীলংকার পর্যটন খাতের দ্বিতীয় দ্রুততম বর্ধনশীল বাজারে পরিণত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ডেইলি এফটি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট পর্যটক সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ ১৩তম স্থানে রয়েছে। ভারত ও রাশিয়া এখনও শ্রীলঙ্কার প্রধান পর্যটন বাজার হলেও বাংলাদেশসহ নতুন কিছু দেশ থেকে পর্যটক আসার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা-কলম্বো রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এয়ারলাইনগুলো।
ভারতীয় ভিসা সংকটের ফলে মালদ্বীপেও বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে ৩৩ হাজার ২৯৫ জন বাংলাদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৫২ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের আগস্টে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে ভারতই ছিল বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য। সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, ভৌগোলিক নিকটতা ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কারণে দেশের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যটক ভারতেই যেতেন।
তবে ভিসা জটিলতার পর অনেকেই বিকল্প গন্তব্য খুঁজছেন। বর্তমানে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা, কেনাকাটা ও অবকাশ যাপনের জন্য ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাংলাদেশি ভ্রমণ করছেন। মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, আর সিঙ্গাপুরে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যটক।
এছাড়া, ইউরোপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও চীনের মতো দেশগুলোতে ৫ থেকে ৮ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটক ভ্রমণ করছেন।
তবে, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ।
![ভারতীয় ভিসা সংকটে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)