ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:১০:৫৫ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

১৬ মে, ২০২৪ | ৮:৫৩ এএম

অনলাইন সংস্করণ

ভারতীয় মসলায় ক্ষতিকর উপাদানের অভিযোগ দেশে দেশে উদ্বেগ

১৬ মে, ২০২৪ | ৮:৫৩ এএম

ভারতীয় মসলায় ক্ষতিকর উপাদানের অভিযোগ  দেশে দেশে উদ্বেগ

কিছুদিন আগেই ভারতীয় মসলাসহ ৫২৭ খাদ্যপণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি শনাক্তের কথা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এরও আগে একই অভিযোগে এমডিএইচ ও এভারেস্ট ব্র্যান্ডের মসলার ওপর হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

 

বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে তদন্ত চালাচ্ছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডও পণ্যগুলো নিয়ে তদন্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে।

 


ভারতীয় মসলার উপাদান নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলমান বিতর্কে বাংলাদেশেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারতীয় মসলার শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও জনস্বাস্থ্যে পণ্যগুলোর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কর্মকর্তারা।

 

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের রসায়ন পরীক্ষণ উইংয়ের পরিচালক গাজী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের পরীক্ষা আমাদের স্বাভাবিক রুটিন কাজ না। এটা নতুন ধরনের কাজ। দেশে এসব পরীক্ষার জন্য সব ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবে এটা এখনই হয়তো হবে না। আমাদের এজন্য প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল কিনতে হবে। আমরা তা কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। কেমিক্যাল হাতে পেলেই আমরা পরীক্ষা করা শুরু করব।’

 

 

বিশ্বব্যাপী মসলাপণ্যের পাওয়ার হাউজ হিসেবে ধরা হয় ভারতকে। ১৮০টি দেশে দুই শতাধিক মসলা ও মসলাজাতীয় পণ্য রফতানি করে ভারত। যার বাজারমূল্য ৪০০ কোটি ডলার। দেশটির অভ্যন্তরীণ মসলা বাজারের আকার ১ হাজার কোটি ডলার, যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মসলা ভোক্তা করে তুলেছে। তবে এখন এ বিখ্যাত মসলাগুলোর ব্যবহার নিরাপদ কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

 

 

উচ্চ মাত্রার ইথিলিন অক্সাইড আছে সন্দেহে গত এপ্রিলে ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট ব্র্যান্ডের বেশ কয়েকটি মসলাপণ্যের বিক্রি বন্ধ করে দেয় সিঙ্গাপুর ও হংকং। ওই মাসেই ইইউর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ৫২৭ ভারতীয় খাদ্যপণ্যে রাসায়নিকটির উপস্থিতি শনাক্তের কথা জানায়। বর্তমানে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ও অস্ট্রেলিয়া এ দুই জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। মালদ্বীপ এরই মধ্যে পণ্য দুটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। চলমান এ বিতর্কের মধ্যে নিউজিল্যান্ডেও বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালানো হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

 

 

নিউজিল্যান্ড ফুড সেফটির অ্যাক্টিং ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জনি বিশপ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইথিলিন অক্সাইড মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে পরিচিত। নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও খাদ্য জীবাণুমুক্ত করায় রাসায়নিকটির ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু এমডিএইচ ও এভারেস্ট ব্র্যান্ডের মসলা নিউজিল্যান্ডেও পাওয়া যায়, আমরা বিষয়টিতে নজর দিচ্ছি।’

 

 

বর্ণহীন গ্যাস ইথিলিন অক্সাইড সাধারণত কীটনাশক হিসেবে ও স্টেরিলাইজিং এজেন্ট (জীবাণুমুক্তকারী) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শুরুতে এটি শুধু চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার কাজে ব্যবহার করা হতো। পরে কৃষি খাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) ইথিলিন অক্সাইডকে গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন (ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।

 

 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, খাদ্যে রাসায়নিকটির উপস্থিতির কারণে ইথিলিন গ্লাইকোলের মতো উপজাত তৈরি হতে পারে। কাশির সিরাপে ইথিলিন গ্লাইকোলের কারণে আফ্রিকায় শিশুমৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। এছাড়া রাসায়নিকটির সংস্রব লিম্ফোমা, লিউকেমিয়াসহ নানা ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। রাসায়নিকটির ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সক্ষমতাই একে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধিকারী উপাদানে রূপ দিয়েছে। এর প্রভাব তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনেরই হতে পারে। শুধু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ নয়, এ রাসায়নিকে দূষিত পণ্য নাড়াচাড়ার মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

 

ভারতীয় মসলায় ক্ষতিকর উপাদানের অভিযোগ  দেশে দেশে উদ্বেগ