ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১২:০২:২১ পিএম

ভারতের পুঁজিবাজারে দীর্ঘ ঊর্ধ্বমুখী ধারার সমাপ্তি দেখছেন বিদেশীরা

৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৭ এএম

ভারতের পুঁজিবাজারে দীর্ঘ ঊর্ধ্বমুখী ধারার সমাপ্তি দেখছেন বিদেশীরা

ছবি: সংগ্রহীত

ভারতের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় ছিল, তবে গত মাসে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি পুঁজি তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে, যা কভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী এক মাসে সর্বোচ্চ পুঁজি প্রত্যাহারের ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের অর্থনীতিতে মন্থরগতি এবং কিছু অর্থনৈতিক সমস্যা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এবং এতে দেশের দীর্ঘ সময়ের ঊর্ধ্বমুখিতা শেষ হতে চলেছে। খবরটি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে।

 

 

গত মাসে ভারতের রুপি ডলারের বিপরীতে রেকর্ড নিম্নমুখী হয়েছে, একই সময়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও কমেছে। ফলে, ভারতের প্রধান দুই পুঁজিবাজার সূচক—নিফটি ৫০ এবং সেনসেক্স—গত মাসে ২০২০ সালের মার্চের পর সবচেয়ে খারাপ ফলাফল অর্জন করেছে। এক মাস আগেও, ভারত ছিল বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল ও আকর্ষণীয় পুঁজিবাজার, তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।

 

 

ভারতের পুঁজিবাজারের আকার ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেলেও, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্থরতা, করপোরেট আয় কমে যাওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নীতির কড়াকড়ির কারণে নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মুম্বাইভিত্তিক মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্সের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা সৌরভ মুখার্জি মন্তব্য করেছেন, "ভারতের অর্থনীতি এমনটি আগেও দেখেছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই পতন কয়েক প্রান্তিক ধরে থাকবে, নাকি আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে।"

 

 

বিশ্লেষকরা প্রযুক্তি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের শেয়ারকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করছেন, কারণ অনিশ্চয়তার এই সময়ে এই খাতের শেয়ারগুলো ভালো পারফর্ম করতে পারে। অন্যদিকে, মার্কিন নির্বাচন নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। এই সময়ে, চীনের পুঁজিবাজারও সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

 

 

সূত্র মতে, গত অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি পুঁজি সরিয়ে নেওয়ার পর চলতি বছর ভারতীয় পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ২০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। বছরের শুরুর দিকে বিনিয়োগ প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও, এখন তা ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে, এই সময়ে ভারতীয় খুচরা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

 

ভারতের পুঁজিবাজারের নিম্নমুখিতার পূর্বাভাস আগস্টে পাওয়া গিয়েছিল। সে সময় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৭ শতাংশ, যা গত পাঁচ প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে ধীর। গত মাসে নোমুরা অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করেছেন, ভারতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা খুব আশাব্যঞ্জক নয়।

 

 

এ বছর একাধিকবার ভারতের ব্লু-চিপ শেয়ার সূচক নিফটি ৫০ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছালেও, গত মাসে এই সূচকটি ৬.২ শতাংশ পতন করেছে। একই সময়ে সেনসেক্স ৫.৮ শতাংশ কমে যায়। ফলস্বরূপ, এটি ২০২০ সালের মার্চের পর সবচেয়ে খারাপ মাস হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে, এমএসসিআই ইন্ডিয়া সূচক কিছুটা ইতিবাচক ছিল, যেখানে এক ডলার আয় করতে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ২৪ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত ছিলেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে এই পরিমাণ ছিল ২৩ ডলার।

 

 

ভারতের পুঁজিবাজার পতনের আরেকটি কারণ হলো শিল্প খাতের আয় কমে যাওয়া। গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, অধিকাংশ ভারতীয় কোম্পানিই প্রত্যাশার চেয়ে কম আয় করেছে, এবং তাই তারা ভারতের ইকুইটি রেটিং ‘ওভারওয়েট’ থেকে ‘নিউট্রাল’-এ নামিয়ে এনেছে। UBS এর প্রধান উদীয়মান বাজার কৌশলবিদ সুনীল তিরুমালাই বলেন, "ভারতে আয়ের অবনতি খুবই তীব্র হয়েছে, এমনকি কিছু ভোক্তা পণ্য কোম্পানিরও আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হচ্ছে না।"

 

 

ভারতের ভোক্তাদের আস্থা কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে, কারণ গত কয়েক মাসে দেশটিতে গাড়ির বিক্রি কমে গেছে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের সিএফও রিতেশ তিওয়ারি জানিয়েছেন, "শিল্প খাতে চাহিদার বৃদ্ধির গতি কমে গেছে।"

 

 

এদিকে, চীনের পুঁজিবাজারের পুনরুদ্ধার ঘটে এবং সরকার আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা চীনা বিনিয়োগকারীদের মনোভাব চাঙ্গা করেছে। এক সময় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ে চীনের তুলনায় বেশি আশাবাদী ছিলেন, তবে এখন তারা চীনের পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন।

 

 

লুমিস সেলসের বৈশ্বিক উদীয়মান বাজার ইকুইটিজের প্রধান আশীষ চৌধুরী মনে করেন, বাজারের এই পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তিনি বলেছেন, "আমরা মনে করি না, প্রণোদনা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পুনর্গঠন সমস্যা সমাধান করবে, কারণ চীনের অর্থনীতি মূলত ধার করা অর্থের ওপর নির্ভরশীল।"

ভারতের পুঁজিবাজারে দীর্ঘ ঊর্ধ্বমুখী ধারার সমাপ্তি দেখছেন বিদেশীরা