ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:২৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ভারতের ভিসা জটিলতায় বাংলাদেশি ফ্লাইট অর্ধেকে,সংকটে ইউরোপীয়গামী ছাত্ররা
৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:২৪ এএম
![ভারতের ভিসা জটিলতায় বাংলাদেশি ফ্লাইট অর্ধেকে,সংকটে ইউরোপীয়গামী ছাত্ররা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/06/20241006112427_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ রেখে আবার তা চালু করলেও চলছে অত্যন্ত সীমিত আকারে। বর্তমানে কেবল শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসার জন্য ভিসার আবেদন করা যাচ্ছে।
ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী ফ্লাইটের সংখ্যাও কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।এদিকে ইউরোপের অনেক দেশের দূতাবাস ভারতে থাকায় সংকটে পড়ছেন ইউরোপে পড়তে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও চিকিৎসার জন্যেও ভিসা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন আবেদনকারীরা। সীমিত ভিসা দেওয়ার প্রভাব পড়ছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও।ফ্লাইট সংখ্যা কমে অর্ধেক
ভিসা জটিলতায় যাত্রী যেতে না পারায় এদের মধ্যে দুইটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট কমে অর্ধেকে নেমেছে, আর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে একটির।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করতো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।পাঁচই অগাস্টের আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই ও চট্টগ্রাম-কলকাতা এই তিনটি রুটে সপ্তাহে মোট ৩২টি বিমান পরিচালনা করতো সংস্থাটি। তবে পাঁচই অগাস্টের পর থেকে দুইটি রুটে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২তে। আর পুরোপুরি বন্ধ আছে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমান চলাচল।
একই অবস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই ও ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হলেও বর্তমানে চলছে মাত্র ১৩টি ফ্লাইট।আর পুরোপুরি বন্ধ আছে কেবল ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী নভোএয়ারের ফ্লাইট।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “যারা এখনও ট্রাভেল করছেন তাদের আর্লিয়ার ভিসা ছিল। হয়তো কিছুদিন পর সেই ভিসাগুলো শেষ হয়ে গেলে ফ্লাইটের সংখ্যা হয়তো আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, যদি ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা এর মধ্যে ক্লিয়ার না হয়।”
ভারত চিকিৎসা ভিসা দিলেও চেন্নাইগামী ফ্লাইটের সংখ্যাও ‘আপ টু দ্য মার্ক’ না বলে জানান এই কর্মকর্তা। এছাড়াও '৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লোড নিয়ে ফ্লাইটগুলো অপারেট করতে হচ্ছে’ বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, “যাত্রী যাওয়ার ফ্লো কমে গেছে। কমার ফলে দেখা যাচ্ছে অনেক ফ্লাইট আন্ডারলোড যাচ্ছে। তখন আমারা এটা কমিয়ে নিয়ে এসে এডজাস্ট করেছি যে এরকম ফ্রিকোয়েন্সি থাকলে আমাদের মোটামুটি অপারেটিং কস্ট উঠে আসবে।”
ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বাংলাদেশি কোনও শিক্ষার্থীকে ইউরোপের দেশগুলোতে পড়তে যেতে হলে, ভারতে গিয়ে সেই দেশের দূতাবাস থেকে দেশটির ভিসা সংগ্রহ করতে হয়।ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রথমে ভারতের ভিসা প্রয়োজন হয়।
কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাঁচই আগস্টের দুইদিন পর থেকে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। প্রায় এক সপ্তাহ পর দেশটি ‘সীমিত আকারে’ ভিসার কাজ চালু করে।সাধারণত কূটনৈতিক, ব্যবসায়ী ও ভ্রমণ-সহ ১৫টি ক্যাটাগরিতে ভারত বাংলাদেশকে ভিসা দিয়ে থাকে।
একদিকে রোমানিয়ান দূতাবাসে যাওয়ার তারিখ এগিয়ে আসা, অন্যদিকে ভারতীয় ভিসা না পাওয়ায় রোমানিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য অফার লেটার পাওয়া সাড়ে তিনশোর মতো শিক্ষার্থী রোমানিয়ার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন বলে জানা যায়।
সার্বিক পরিস্থিতি জানার পর কাছাকাছি যে দেশগুলোতে রোমানিয়ার দূতাবাস আছে সেখান থেকে অফার লেটার পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিসা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
রোমানিয়া, অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে পড়তে যেতে আগ্রহী সব শিক্ষার্থীরই এই সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলাম। আমাদের বলেছিল কাজ হবে, কিন্তু হয় নাই। আমরা যে কী করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না!
ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় ব্যবসায় অবস্থা বেশ খারাপ। কারণ এসব দোকান থেকে যে দেশগুলোর ভিসার জন্য আবেদন করা হয়, তার বড় একটি অংশই ভারতের।
একটি নির্দিষ্ট সময়র জন্য স্লট খোলার কারণে সবাই একসঙ্গে তাতে ঢোকার চেষ্টা করায় সার্ভার ডাউন থাকে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
তবে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পাঁচ থেকে সাতদিন পর ডেলিভারি থাকলেও ১৫ দিন পরও তা হাতে না পাওয়ায় আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
পিআরসি বা প্রায়োর রেফারেল চেকের এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত ভিসা দেওয়ার আগে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আবেদনকারীর ব্যাকগ্রাউন্ডের খোঁজ খবর নেয়।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে পর্যটন খাতে ভ্রমণের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ, যা কিনা সে দেশে মোট বিদেশি পর্যটকের ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।ফলে ভিসা না দেওয়ায় কেবল যে বাংলাদেশিরাই ভোগান্তিতে পড়ছে, তেমনও না।ভিসা কার্যক্রম সীমিত থাকায় সমস্যায় পড়েছেন ভারতের পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।
ভিসা না দেয়ার কারন সম্পর্কে ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে ভারত আশ্বস্ত হচ্ছে না বলেই হয়তো’ এখনও ভিসা নিয়ে এমন কড়াকড়ি করছে দেশটি, এমনটাই মনে করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির।
“কলকাতায় বাংলাদেশি ভিজিটরস না থাকার ফলে ট্যুরিজম বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। কলকাতার বিপণীবিতানগুলোর অবস্থা একটু চাপের মুখে আছে। তাতে করে স্থানীয় অর্থনীতির ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটাতে লাভ কারোই হচ্ছে না। দুই দেশের মানুষ এতে করে এফেক্টেড হয়ে যাচ্ছে”, বলছিলেন মি. কবির।
লাভ না হলেও ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের কঠোরতার কারণ কি কেবলই নিরাপত্তা না এর পেছনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও আছে, উঠছে এমন প্রশ্নও।
তবে এক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তার প্রসঙ্গ মুখ্য হয়ে ওঠে, তবে কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলেই মত এই বিশ্লেষকের।
![ভারতের ভিসা জটিলতায় বাংলাদেশি ফ্লাইট অর্ধেকে,সংকটে ইউরোপীয়গামী ছাত্ররা](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)