ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:১৫:০৯ পিএম

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কোনো টানাপড়েন নেই

২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:১৫ এএম

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কোনো টানাপড়েন নেই

ছবি: সংগ্রহ

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো টানাপড়েন নেই। ভারত থেকে নিয়মিত চাল, আলু, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হচ্ছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উদ্যোগে আলুসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক নয়। এর ফলে বাংলাদেশের জন্য ভারত, পাকিস্তান বা চীন কোনো ইস্যু নয়; বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবাইকে আমরা সংযুক্ত করতে চাই।

 

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাজারে নিত্যপণ্যের যে মূল্যস্ফীতি, সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে তার অনেকটা সমাধান করা সম্ভব। সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে রাত-দিন কাজ করছি। পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করছি। বিশেষ করে রমজান মাস সামনে রেখে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিতে কাজ করছি। পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই যথেষ্ট সংবেদনশীল; ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও তদারকি কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে।’

 

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশকে উদার ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় বাজারে যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, এখন দেশের ক্ষেত্রে (পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে) সিন্ডিকেট হলেও সমস্যা।

 

অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহযোগিতায় খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল, ডিমসহ আরও কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমানো হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে, এটি মেনে নিয়েই শুধু পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনার জন্য এসব শুল্ক কমানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

 

বাজারে সিন্ডিকেটকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যুক্ত থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে উত্তর একটাই, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা দূর করে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে এই (নিত্যপণ্য) ব্যবসায় যুক্ত করা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তার বক্তব্য, আপনারা আরও বেশি সংখ্যায় এসব ব্যবসায় যুক্ত হন এবং আরও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করুন।

 

দেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। অক্টোবর মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে।

 

এ পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রথমত, টিসিবির মাধ্যমে প্রতি মাসে এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে কিছু পণ্য নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ঢাকা মহানগরে ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাক থেকে ভর্তুকি মূল্যে তেল, ডাল, চাল বিক্রি করা হচ্ছে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই এই কার্যক্রম চলছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তা চলবে। এর সঙ্গে আজ থেকে ঢাকায় আলু বিক্রি শুরু করল টিসিবি।

 

মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছু তাৎক্ষণিক ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘দাম বেড়ে যাওয়ার পরে আমরা টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে আলু বিক্রি শুরু করেছি। পাশাপাশি আলু আমদানির অনুমোদনও দেওয়া আছে। এগুলো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহযোগিতায় খেজুর, চিনি, সয়বিন তেল, ডিমসহ আরও কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমানো হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে। এটি মেনে নিয়েই শুধু পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনার জন্য এসব শুল্ক কমানো হয়েছে।’

 

সেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টের বিষয়ে আমরা অবগত। তবে দাম কমানোর বিষয়ে আমাদের পরিপূর্ণ চেষ্টা রয়েছে। এতদিনের পদক্ষেপের ফলে এরই মধ্যে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি আসতে শুরু করেছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ আরও বাড়ানো গেলে দ্রুত সময়ে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করছি।’

 

বাজারে সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে তাতে মুষ্টিমেয় লোকজন যুক্ত থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে উত্তর একটাই, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা দূর করে আরও অধিক সংখ্যক লোককে এ ধরনের (নিত্যপণ্য) ব্যবসায় যুক্ত করা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যেও বলব, আপনারা আরও বেশি সংখ্যায় এসব ব্যবসায় যুক্ত হন এবং আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করুন।’

 

এর ফলে টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ লিটার ভোজ্য তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আলু কিনতে পারবেন। প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০, চাল ৩০ টাকা ও আলু ৪০ টাকায় কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কোনো টানাপড়েন নেই