ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:১৬:২৮ পিএম

ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়লেও দাম কমছে না

৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:১৪ এএম

ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়লেও দাম কমছে না

ছবি: সংগ্রহ

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা পূরণের জন্য ভোগ্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ছয় মাসে যে পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে, তাতে রমজান মাস পর্যন্ত কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সম্প্রতি সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করায় আমদানিকারকরা বিপুল পরিমাণ এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলেছেন, যার মাধ্যমে রমজান মাসের আগেই পণ্য দেশে আসবে। তবে, বাজারে শুল্ক সুবিধার প্রভাব এখনও ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।

 

 

এ বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে দেশের বৃহত্তম করপোরেট হাউজগুলো ভোগ্যপণ্য আমদানির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে বর্তমানে মাঝারি ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে এলসি খুলে পণ্য আমদানি করছেন। ফলে আমদানির ক্ষেত্রে ভারসাম্য ফিরে এসেছে এবং বড় করপোরেট হাউজগুলোর নিয়ন্ত্রণ কমেছে। শুল্ক প্রত্যাহারের পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসির পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকও পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বাড়া ১১টি পণ্যের আমদানির জন্য এলসি মার্জিন শিথিল করেছে। গত ১৭ নভেম্বর একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের এই নির্দেশনা পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুরের মতো পণ্যে এলসি মার্জিন শিথিল করা হয়েছে, যা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। এই পণ্যগুলোর আমদানিতে ব্যাংক এবং গ্রাহকের স্বচ্ছ লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এলসি সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

 

 

চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা জানাচ্ছেন, ১ অক্টোবর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৫২টি এলসি খুলেছেন। এর মাধ্যমে গম, খেজুর, ছোলা, সয়াবিন, পাম অয়েল, মশুর ডাল, চিনি সহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এসব পণ্য ইতিমধ্যে দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে, যা বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর দিকে ইঙ্গিত দেয়।

 

 

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. শাহ আলম জানান, পণ্য আমদানি দ্রুত হচ্ছে এবং ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে দাম কিছুটা কমেছে।

 

 

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বর্তমানে ছোলা ৩ হাজার ৯০০ টাকা, মশুর ডাল ৪ হাজার টাকা, সয়াবিন ৬ হাজার ৫০০ টাকা, পামঅয়েল ৬ হাজার ১০ টাকা এবং চিনি ৪ হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এসব পণ্যের দাম আগের তুলনায় মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে।

 

 

তবে, বাজার সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, শুল্ক প্রত্যাহারের পরও খুচরা বাজারে সাশ্রয়ী দামের সুবিধা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। অনেক পণ্য এখনও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে, যা ভোক্তাদের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে।

 

 

আগামী দিনে যদি বাজার মনিটরিং শক্তিশালী করা না যায়, তবে ভোক্তারা শুল্ক সুবিধার সুফল থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। এজন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও বাজার তদারকি আরও কার্যকরী করতে হবে, যাতে রমজান মাসে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারেন।

ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়লেও দাম কমছে না