ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:৩৯:১৮ এএম

মাছ সংকটে খাঁ খাঁ করছে দুবলারচরের শুঁটকি পল্লী

৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:০ পিএম

মাছ সংকটে খাঁ খাঁ করছে দুবলারচরের শুঁটকি পল্লী

ছবি: সংগ্রহ

সুন্দরবনের দুবলারচরের শুঁটকি পল্লীতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে, যা শুঁটকি উৎপাদন কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। মৌসুমের এই সময়ে পল্লীটি নানা প্রজাতির মাছে পরিপূর্ণ থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ভারা ও চাতাল খালি পড়ে আছে। জেলেরা গভীর সাগরে জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না।

 

চলতি বছরের ৪ নভেম্বর থেকে শুঁটকি মৌসুম শুরু হলেও শুরু থেকেই মাছের পরিমাণ কম। দামি মাছ যেমন লইট্যা, ছুরি, রূপচাঁদা, লাক্ষার দেখা মিলছে না বললেই চলে। যে মাছ ধরা পড়ছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই কম দামের ছোট চিংড়ি, চ্যালা ও পারসে। এসব মাছের বাজারমূল্য তুলনামূলক কম, যা ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক সংকট সৃষ্টি করছে।

 

আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর জেলেরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরার কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। গত ২০ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারেনি। সাগরে পর্যাপ্ত মাছের অভাবে মহাজনদের চালান ঠিক রাখার চিন্তায় পড়তে হয়েছে।

 

বৃহত্তম শুঁটকি পল্লী আলোরকোলের ব্যবসায়ীরা জানান, এবছর তারা শুঁটকি ব্যবসায় কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু মাছের অভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন। জেলেদের বেতন নিশ্চিত করতে হলেও মাছ আহরণের ঘাটতির কারণে ব্যবসায়ীদের লাভ তো দূরে থাক, মূলধন রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার আলোরকোল টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, গত সপ্তাহে শুধু আলোরকোলে ১৬-১৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য পল্লীগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। মাছ সংকটের কারণে এক সপ্তাহে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১-১.২৫ কোটি টাকা।

 

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরল করীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শুঁটকি মৌসুমের আগে অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। এই সংকটের ফলে মহাজনদের লোকসান ছাড়াও সরকারি রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। গত বছর শুঁটকি খাত থেকে ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হলেও এবছর ৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

মাছের অভাব এবং আবহাওয়ার প্রতিকূলতা দুবলারচরের শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী ও জেলেদের জন্য গভীর সংকট তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

মাছ সংকটে খাঁ খাঁ করছে দুবলারচরের শুঁটকি পল্লী