ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
মিথেন নিঃসরণের তথ্য লুকাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:০ পিএম
![মিথেন নিঃসরণের তথ্য লুকাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/23/20241123152942_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
আজারবাইজানে গতকাল শেষ হলো জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৯। সম্মেলন ঘিরে আলোচনায় ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতা ঠেকাতে নেয়া পদক্ষেপের অগ্রগতি ও দরিদ্র দেশগুলো কী ধরনের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে এমন নানা বিষয়। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনে আয়োজক দেশ আজারবাইজানের ব্যাপক অংশগ্রহণও ছিল সমালোচনায়। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, সম্মেলনে জ্বালানি তেল ও গ্যাস শিল্প খাতে মিথেন নিঃসরণ প্রধান এজেন্ডাগুলোর মধ্যে ছিল না। অথচ এর পরিবেশগত প্রভাবের কারণে আরো গুরুত্ব পাওয়া দরকার ছিল। কারণ ক্ষতিকারক এ গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতে লুকোচুরি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো মিথেন নিঃসরণের মাত্রা লুকানোর জন্য নানা উপায় খুঁজে বের করেছে। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও কোম্পানিগুলোর চাতুর্যে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে মিথেনের ভয়াবহতা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে কার্বন নিঃসরণ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অবদান রাখে মিথেন গ্যাস। তবে এ প্রসঙ্গে কমই আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু, মহাকাশবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এরিক কোরট বলেন, ‘জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো অনেক বেশি মিথেন নিঃসরণ করছে যা আমরা জানি না।’
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে জ্বালানি খাতের নিঃসরণ নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। এ অবস্থায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি রূপান্তর নিয়ে আশাবাদী বিশ্লেষকরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
২০২১ সালের কপ সম্মেলনে ‘গ্লোবাল মিথেন প্লেজে’র সূচনা করেছিল। এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ২০২০ সালের তুলনায় বৈশ্বিক মিথেন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নেয়া হয়। দেড় শতাধিক দেশ এ উদ্যোগে সমর্থন জানায়।
এমন প্রতিশ্রুতির মাঝে থেমে নেই মিথেন নিঃসরণ, বরং বাড়ছেই। সেপ্টেম্বরে আর্থ সিস্টেম সায়েন্স ডাটা জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, গত দুই দশকে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের ঘনত্ব শিল্পায়ন-পূর্ব যুগের তুলনায় ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি, যা অন্তত আট লাখ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
ক্যাপটেরিওর ফ্লেয়ারিং বিশেষজ্ঞ মার্ক ডেভিস বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় গ্যাস বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত করা (ভেন্টিং), বাড়তি গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা (ফ্লেয়ারিং) ও পাইপলাইন বা সরঞ্জামে ক্রটির কারণে বিশ্বের মোট গ্যাসের উৎপাদনের প্রায় ৭ শতাংশ অপচয় হয়। এ গ্যাস ক্যাপচারের মাধ্যমে বিক্রি করা হলে বায়ুমণ্ডলে ৬৮০ কোটি টন নিঃসরণ কমানো এবং প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার আয় করা সম্ভব হতো।’
পুরনো প্লান্ট ও মরিচা পড়া যন্ত্রপাতি থেকে লিক হওয়া গ্যাস একটি বড় সমস্যা। শুধু ইরান, অ্যাঙ্গোলা বা ভেনিজুয়েলায় নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতেও এ সমস্যা রয়েছে। চিলির সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ও গ্লোবাল মিথেন হাবের প্রধান নির্বাহী মার্সেলো মেনা বলেন, ‘কোম্পানিগুলো লিকেজ মেরামতের চেয়ে উৎপাদন বাড়াতে পছন্দ করে।’
আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল কোম্পানি সোকারসহ অনেক কোম্পানি মিথেন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত বছর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ সম্মেলনে ৫০টি কোম্পানি একত্রে একটি উদ্যোগ নেয়। এর লক্ষ্য, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের প্রাথমিক উৎপাদন পর্যায়ে মিথেন নিঃসরণ শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া এবং ২০৩০ সালের মধ্যে রুটিন ফ্লেয়ারিং বন্ধ করা।
তবে আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে শিল্প খাত থেকে মিথেন নিঃসরণ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল এবং তা তখন থেকে প্রায় একই স্তরে রয়েছে। এসব নিঃসরণ সম্ভবত কম হিসাব করা হচ্ছে। আইইএ আরো জানাচ্ছে যে জ্বালানি খাত থেকে বৈশ্বিক মিথেন নিঃসরণ জাতিসংঘের রিপোর্টের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি।
মিথেন ফ্লেয়ারিংও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতি বছর গ্যাস ফ্লেয়ারিংয়ের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ঘনমিটার। এ গ্যাস ক্যাপচার করা হলে তা পুরো সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হতো।
বিশ্বব্যাংকের একটি উদ্যোগের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া অন্য সব ফ্লেয়ারিং না করতে একমত হয়েছে সংশ্লিষ্ট খাতের কোম্পানিগুলো। এতে কোম্পানির নিজস্ব অবকাঠামো থেকে মিথেন নিঃসরণের প্রতিবেদনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাস্তবে দেখা যায়, তাদের পরিচালনাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মিথেন নিঃসরণ করে। বড় ১০ জ্বালানি তেল কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত ফ্লেয়ারিংয়ের অর্ধেকের বেশি অংশ সংঘটিত হয় সেসব অবকাঠামো থেকে যেগুলো কোম্পানি সরাসরি পরিচালনা করে না। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের (বিপি) ক্ষেত্রে এ পরিমাণ ছিল ৮৫ শতাংশের বেশি। যদিও কোম্পানিটির দাবি, তাদের সব অবকাঠামোর ফ্লেয়ারিংয়ের প্রতিবেদন দেয়া হয়।
পরিবেশবাদী সংস্থা ক্লিন এয়ার টাস্কফোর্সের মতে, এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের অভাবে বড় জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলো প্রকৃত সমস্যা লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কার্বন ম্যাপারের ডুরেন বলেন, ‘স্যাটেলাইট ও বিমান থেকে রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি মিথেন গ্যাসের ভয়াবহতা দৃশ্যমান করে তুলেছে।’
প্রসঙ্গত ২০২২ সালের পর অন্তত ১৩টি ‘ইমিশনস মনিটরিং স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রের জন্য আরো শত শত স্যাটেলাইট প্রয়োজন। এ ব্যয়বহুল প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রীয় সমর্থন প্রয়োজন। উন্নত ভূতাত্ত্বিক জরিপেরও প্রয়োজন হবে।
![মিথেন নিঃসরণের তথ্য লুকাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)