ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মূল্যস্ফীতি কমার অগ্রগতি দেখা যাবে জুনের মধ্যে
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০ পিএম
![মূল্যস্ফীতি কমার অগ্রগতি দেখা যাবে জুনের মধ্যে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/01/30/20250130153516_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দেশে দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গণ-অভ্যুত্থানের পর এর লাগাম টেনে ধরতে অন্তর্বর্তী সরকার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এসবের কোনো ইতিবাচক প্রভাবই বাজারে দেখা যাচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া নীতির ফলাফল আগামী জুনের মধ্যে দেখা যাবে।’
প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা; পরিপ্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শিরোনামে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো নীতিই কাজ করছে না। বাস্তবে তা কাজ করছে। উন্নত দেশগুলোয়ও এসব পদক্ষেপ নেয়ার পর সুফল পেতে ১০-১২ মাস সময় লাগে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যে বড় অগ্রগতি হবে।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব খুব বাড়বে না উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এ খাতের সংস্কার দরকার। এ সংস্কার করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। বর্তমান সরকার সংস্কারের কাজটা শেষ করতে পারবে না, তবে শুরু করে দিয়ে যেতে পারবে।’ কর প্রশাসন ও করনীতি আলাদা করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘এটা হওয়ার পর সারা বছর নীতি নিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে।’
বাংলা কিউআর কোড চালু করা হলেও জনপ্রিয় হয়নি। একই ধরনের সেবায় ভারত পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না—এমন প্রশ্ন রেখে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এমএফএস (মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস) আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা এগোতে না পারার একটা বড় কারণ, এটাকে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেয়া হয়েছিল। এমএফএসে আন্তঃলেনদেন পরিচালনার জন্য “বিনিময়” নামে যে প্লাটফর্ম করা হয়েছিল, সেটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানি।’
মোবাইলের কলরেটের ওপর কর বৃদ্ধিরও সমালোচনা করেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘৫৮ শতাংশ কর খুবই বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কর (টেলিকম খাতে) বাংলাদেশে। এটা আমাদের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। এর ফলে কলড্রপ বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা যদি তাদের বিনিয়োগের রিটার্ন না পান, তাহলে তা (সেবা) প্রাণবন্ত হবে না।’ আমদানি ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই ভ্যাট ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন গভর্নর।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য উৎসে কর কর্তন যৌক্তিক করা। আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। ব্যবসায়ীদের চাপ দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ভ্যাটের হার কমানো হবে। ব্যবসায়ীদের যেন কষ্ট না হয়, তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয়কর ও ভ্যাট হার যৌক্তিক করা হবে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক হারও যৌক্তিক করা হবে। শুল্ক-কর হারে বড় পরিবর্তন আসবে। যেখানে আদায়ের সুযোগ আছে, সেখানে করের আওতা বাড়ানো হবে।’
অনুষ্ঠানে এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘সরকারের ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হবে। সারা জীবন আমরা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করব আর কর আদায়ের জন্য একই মানুষকে জবাই করব, তা হতে পারে না।’
অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা মাসরুর রহমান বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড নিতে গেলে অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে আবার পিএসআর (রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র) লাগে। কিন্তু একই দেশে রিটেইল লোন নিতে গেলে পিএসআর দিতে হয় না। ১৭ কোটি লোকের দেশে ন্যূনতম এক কোটি ক্রেডিট কার্ড হওয়া উচিত। আর ক্রেডিট কার্ডের করমুক্ত সীমা ৫ লাখ টাকা হওয়া উচিত।’
আলোচনায় আরো অংশ নেন হাতিল ফার্নিচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল এ চৌধুরী, লা-রিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মন্নুজান নার্গিস, বিকাশের সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর, শেয়ারট্রিপের সিইও সাদিয়া হক, এসিআই লজিস্টিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।
![মূল্যস্ফীতি কমার অগ্রগতি দেখা যাবে জুনের মধ্যে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)