ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:২০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে ৩০%
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:২০ এএম

ছবি: সংগ্রহ
আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে দেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া এসব পণ্যের তালিকায় রয়েছে চিনি, সয়াবিন তেল, ডালজাতীয় পণ্য, ছোলা, মটর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও খেজুর। পণ্যভেদে কোনো কোনোটির আমদানি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে। প্রবৃদ্ধি দেখানোর ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের অক্টোবর-জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়কে বিবেচনায় নেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণপত্র বা এলসি নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে নয়টি ভোগ্যপণ্যের মোট আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন। আর চলতি অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টন। সে হিসাবে পণ্যের আমদানি বেড়েছে ৩০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাজারসংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হলো বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এবার ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে পেরেছেন। এ কারণে রমজান উপলক্ষে বাজারে পণ্যের কোনো ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। সরকার বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে পারলে কিছু পণ্যের দাম কমতেও পারে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে দেশে রমজান মাস শুরু হতে পারে আগামী ১ মার্চ। আর গত বছর রোজা পালন শুরু হয়েছিল ১১ মার্চ। রোজাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছর ভোগ্যপণ্যের আমদানি বা সরবরাহ বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে সরকার। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একাধিকবার বলেছেন, এবার রোজা উপলক্ষে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে না। বাজারে চাহিদার চেয়েও বেশি পণ্যের জোগান নিশ্চিত করা হবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্যমতে, এবার রমজানে বাজারে পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে। সে অনুযায়ী প্রশাসন কঠোরভাবে বাজার তদারকি নিশ্চিত করতে পারলে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা এবার তেমন একটা নেই।
সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডলারের উচ্চমূল্য, ডলার সংকটসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের ভোগ্যপণ্য বাজার আমদানি ও চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ নিয়ে সংকট ছিল। এর মধ্যেও ব্যবসায়ীরা আমদানির মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করে গেছেন। আসন্ন রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী নিত্য ভোগ্যপণ্য চাহিদা অনুযায়ী আমদানির উদ্যোগও নিয়েছে। আশা করি, এবারের রমজানে পণ্যের সংকট কিংবা মূল্যবৃদ্ধির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটবে না। মিল মালিকরা সরবরাহ ঠিক রাখলেও দেশের কোনো প্রান্তে গিয়ে মজুদ বা দাম বাড়ানোর চেষ্টা হলে সেটি প্রশাসন কঠোরভাবে মনিটরিং করলে এবারের রোজায় ভোগ্যপণ্য বাজারে স্বস্তি থাকবে বলে আশা করা যায়।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ টন চিনি আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে চিনির আমদানি ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৫ টন। সে হিসাবে এবার চিনি আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ।
এ সময় সয়াবিন তেলের আমদানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮২০ টন।
আমদানি বাড়ার পরও ভোজ্যতেলের দাম এখনো না কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বড় গ্রুপগুলোর পণ্য আসেনি, পথে রয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ২৫ তারিখের পর সরবরাহ বাড়বে। এ প্রতিশ্রুতি যেন তারা রাখেন, সে বিষয়টি নিশ্চিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হলে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়বে আর তুলনামূলক ছোট ব্যবসায়ীদের বদনাম হতে থাকবে। ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক রাখার বিষয়ে সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রত্যাশা করছি।’
৪৪ শতাংশেরও বেশি আমদানি বেড়েছে ডালজাতীয় পণ্যের। গত জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে এসব পণ্যের আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ টন। এর আগে গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৩৭৮ টন। ডালজাতীয় পণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে ছোলা ও মটর ডালের আমদানিও। এর মধ্যে ছোলার আমদানি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। আর ৮৫ শতাংশ বেড়েছে মটর ডালের আমদানি।
দেশের বাজারে এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বেশ স্থিতিশীল। বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই এখন দেশের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে। এ অবস্থায় পণ্যটির আমদানি বেড়েছে ২ শতাংশ। আর রসুনের আমদানি ২০ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে রসুন আমদানি হয়ছিল ৫০ হাজার ৯৯৫ টন। এবার ৬১ হাজার ৩৮১ টন রসুন আমদানি হয়েছে। রমজান উপলক্ষে আদা আমদানি বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে ৩৩ হাজার ৫৭৩ টন আদা আমদানি হলেও এবার ৫২ হাজার ৫১৫ টন আদা আমদানি হয়েছে।
গত বছরের রমজানে খেজুরের বাজার ছিল বেশ অস্থিতিশীল। খেজুরের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পতিত হাসিনা সরকারের শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জনগণকে আঙুর ও খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে এবার রমজান উপলক্ষে খেজুরের আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে খেজুরের আমদানি ছিল ১১ হাজার ৭১৪ টন। এবার ১৪ হাজার ৪২০ টন খেজুর আমদানি হয়েছে।
পাইপলাইনে থাকা আমদানি পণ্য বাজারে প্রবেশ করা মাত্র ভোগ্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন তারা।
মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভোক্তা সাধারণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রাকে করে ঢাকা শহরের কারওয়ান বাজার, মিরপুর, নিউমার্কেট, গুলশান ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছি। চিনি দিচ্ছি ১১৫ টাকায়। এভাবে রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যে ডিসকাউন্ট রেটে বাজারে দিচ্ছি। আমদানীকৃত সয়াবিন তেল যেটা সাগরে আছে, বাজারে ঢুকলে পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়ে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দামে ভোক্তাদের জন্য সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কোনো কারণই নেই।’
রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তদারকি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারের তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রমজানে খেজুর, মসলা, ফল ও ভোজ্যতেলের আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তিনটি সভা হয়েছে। সভায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ তারিখের পর থেকে ভোজ্যতেলের সংকট কেটে যাবে। অন্যান্য পণ্য বাজারে পর্যাপ্ত রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যের ওপর শুল্ক এবং আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছুটা প্রভাব দেখা যেতে পারে, যেমন আজোয়া খেজুর ও এলাচ। ফলের ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হলে ভোক্তারা সহনীয় মূল্যে রমজানে পণ্য কিনতে পারবেন। সামগ্রিকভাবে রমজানে এসব পণ্যের কোনো সংকট আশঙ্কা করছি না। বাজার তদারকিতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।’
