সদ্য বিদায় হওয়া বছরের অধিকাংশ সময়েই ডিম ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল ছিল। বিশেষ করে, ডজন প্রতি ডিমের দাম ১৮০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা ক্রেতাদের জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন

রমজান মাসে ১১টি অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের আমদানি সহজীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ

তবে নতুন বছরের শুরুতেই ডিম ও মুরগির দাম আবারও বাড়িয়ে ৫ টাকা বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, আসন্ন রমজান উপলক্ষে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ভোক্তাদের সুবিধা দিতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

৪ জানুয়ারি, শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার এই উদ্যোগের বিস্তারিত তথ্য জানান। তিনি জানান, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ঢাকা শহরের ১০০টি পয়েন্টে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডিম, ব্রয়লার মুরগি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা শহরের ২০টি পয়েন্টে এই কার্যক্রম শুরু হবে এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১০০টি পয়েন্টে এটি সম্প্রসারিত হবে। এসব পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হবে এসব পণ্য, যাতে ক্রেতারা কম দামে পণ্য কিনতে পারেন।

বিপিএ সভাপতি আরও জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষ ব্যক্তি ও উদ্যোক্তা সাপ্লাই চেইনে যুক্ত হবে, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারা কৃষি খাত এবং ভোক্তা-উৎপাদকের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের দক্ষতা এবং উদ্যমের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি আরও কার্যকরী হবে এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় উন্নতি আনবে।

এদিকে, বিপিএ সভাপতি অভিযোগ করেন যে, করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড এবং মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এই কোম্পানিগুলোর হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় ডিম-মুরগির দাম কমছে না এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। সুমন হাওলাদার বলেন, ‘‘বিশ্ববাজারে ফিডের দাম কমলেও দেশে তা কমেনি, যার ফলে মুরগির দাম বেড়ে যাচ্ছে।’’ তিনি সরকারের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বিপিএ সভাপতি আরও বলেন, ‘‘প্রান্তিক খামারিদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড ও মুরগির বাচ্চার সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত।’’ তিনি সরকারের কাছে খামারিদের সুরক্ষায় আরও কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে, বিপিএ সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে, যার মধ্যে সিন্ডিকেটের হাত থেকে প্রান্তিক খামারিদের রক্ষা করার ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড এবং মুরগির বাচ্চার সরবরাহ, এবং খামারিদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি রয়েছে।

এছাড়া, বিপিএ সভাপতি বলেন, ‘‘এই উদ্যোগটি বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং রমজান মাসে সাধারণ মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে সহায়তা করবে।’’

ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিতিশীলতা এবং সিন্ডিকেটের আধিপত্য ভেঙে সরকারের মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা এবং ভোক্তাদের জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা কৃষি খাতের উন্নতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনতে সহায়ক হবে।