ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১%
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০ পিএম
![রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১%](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/01/21/20250121150712_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। জুলাইজুড়ে ছিল কোটা বহালের বিরুদ্ধে আন্দোলন। পরে সরকার পতন আন্দোলন রূপ নেয়। ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরও দেশজুড়ে অস্থিরতা কাটেনি। নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন বারবারই পথে নেমেছে। এতে অর্থনীতিতে তৈরি হয় নতুন অনিশ্চয়তা।
সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক কাঠামো ঝুঁকিতে পড়ে, যার প্রভাব পড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই)। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে এফডিআই এসেছে মাত্র ১০৪ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার বা ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এটি গত সোয়া পাঁচ বছরে যে কোনো প্রান্তিকের মধ্যে সর্বনি¤œ এফডিআই। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এফডিআই এসেছিল ১৪৭ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার, যা ছিল পাঁচ বছরে সর্বনি¤œ।
গত সোয়া পাঁচ বছরে কোনো প্রান্তিকে ২০০ মিলিয়নের নিচে এফডিআই এসেছিল আরও দুইবার। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এফডিআই এসেছিল ১৫৬ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এফডিআই এসেছিল ১৯৯ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নানা অনিশ্চয়তায় গত অর্থবছর বিদেশি বিনিয়োগে মন্দাভাব গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর নিট এফডিআই এসেছে এক দশমিক ৪১৫৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৪১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আসে ৩৬০ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৩৭৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৪০৩ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন এবং এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২৭২ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ কমেছে ২৫৬ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার বা ৭১ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর গত বছর এপ্রিল-জুন সময়ের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে এফডিআই কমেছে ১৩৭ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার বা ৫০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি অর্থবছর বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ খুব একটা বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগ (গ্রস ইনফ্লো) আসে এক বিলিয়ন ডলারের কম, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। এ সময়ে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৯৬৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ফেরত গেছে বা আউটফ্লো ছিল ৮৬৫ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৯০৩ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। তবে ওই প্রান্তিকে আউটফ্লো ছিল কম, ৫০৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ২০২১-২২ অর্থবছর ১৭১ কোটি পাঁচ লাখ ডলার। ওই অর্থবছর নিট এফডিআইয়ের মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আসে ৩৯৭ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৬৭৬ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৪৮৯ দশমিক ২৪ মিলিয়ন এবং এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ১৪৭ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলার।
পরের অর্থবছর এর পরিমাণ কমলেও পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই আসে ২০২২-২৩ অর্থবছর ১৬০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ওই অর্থবছর নিট এফডিআইয়ের মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আসে ৪৯৭ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৩৮৩ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ২৯৭ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন এবং এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৪২৬ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে আট দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চগুলোয় (ইপিজেড) ৯০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার এবং অন্যান্য এলাকায় পাঁচ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ শেখ হাসিনা বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও সেগুলো প্রকৃতপক্ষে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে।
চলতি অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে দেশে আসা নিট এফডিআইয়ের মধ্যে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল তথা নতুন পুঁজি ছিল ৭৬ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ডলার, রিইনভেস্টেড আরনিংস ৭২ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ইন্ট্রা-কোম্পানি (আন্তঃকোম্পানি) ঋণ ৪৫ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার ঋণাত্মক। অর্থাৎ ইন্ট্রা-কোম্পানি ঋণ আসার চেয়ে ফেরত দিতে হয়েছে বেশি। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে দেশে আসা নিট এফডিআইয়ের মধ্যে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল তথা নতুন পুঁজি ছিল ১৪৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার, রিইনভেস্টেড আরনিংস ২৭১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার এবং ইন্ট্রা-কোম্পানি (আন্তঃকোম্পানি) ঋণ ৫৫ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার ঋণাত্মক।
চলতি অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে সর্বোচ্চ এফডিআই এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে, যার পরিমাণ ৬২ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬১ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ও চীন থেকে ৫৫ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। অন্যান্য দেশ থেকে এসেছে ৩৫ মিলিয়ন ডলারেরও কম। আর চলতি অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে তৈরি পোশাক খাতে, যার পরিমাণ ৭৪ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৬৫ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার। অন্য খাতগুলোয় তা ৪০ মিলিয়ন ডলারেরও কম। প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশে এফডিআই স্টকের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৭ দশমিক ৬৭৭ বিলিয়ন ডলার। জুন শেষে এর পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক ৭২৭ বিলিয়ন ডলার।
![রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১%](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)