ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৪:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
৫ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা
১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৪:৩৫ পিএম

ছবি: সংগ্রহ
নতুন অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২,০০০ কোটি টাকায়, যা আগের মাসের তুলনায় ১০,০০০ কোটি টাকা বেশি। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে সরকার।
বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে ট্যাক্স ছাড় দেওয়া এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে যাওয়া রাজস্ব আদায়ের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতি ফিরে না আসা এ সমস্যার মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনারেটের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে পেট্রোলিয়াম আমদানি কমেছে ৮ লাখ মেট্রিক টন। পাশাপাশি, প্রতি লিটারে ট্যাক্স কমানোর কারণে রাজস্ব কমেছে ২১৯ কোটি টাকা। ভোজ্যতেলের ওপর ট্যাক্স ছাড়ের কারণে মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব কমছে।
রাজস্ব আদায়ের ঘাটতির আরেকটি বড় কারণ হলো, অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এস আলম গ্রুপের ব্যবসা থেকে মাসে গড়ে ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আসত, যা এখন বন্ধ।
সাবেক এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিনের মতে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ কমে যাওয়ায় এ খাত থেকে ট্যাক্স-ভ্যাট আদায়ের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু নভেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ১.২৭ লাখ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৪২,২৩০ কোটি টাকা কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও রাজস্ব আদায় কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ বা ৩,৪০৮ কোটি টাকা। নভেম্বরেই এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২,৫০০ কোটি টাকা।
মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান সম্প্রতি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি ন্যায্য রাজস্ব আদায়ে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং ভুয়া রাজস্ব প্রতিবেদন দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন।
চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, ডিসেম্বর থেকে আমদানি বাড়ায় আগামী মাসগুলোতে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা কিছুটা উজ্জ্বল। তবে লক্ষ্যমাত্রার বড় ঘাটতি পূরণ করা খুব কঠিন হবে।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে আমদানি শুল্ক ও ট্যাক্স নীতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। নিত্যপণ্যে ট্যাক্স ছাড়ের প্রভাব বিবেচনা করে বিকল্প আয় খাত খুঁজতে হবে।
উৎপাদনশীল খাত এবং ছোট-মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে সচল করতে হবে। এতে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বড় প্রকল্পগুলোর কাজ পুনরায় শুরু করা এবং নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া রাজস্ব আদায় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সরকার এবং এনবিআরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমদানি, উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে। একই সঙ্গে ট্যাক্স নীতিমালা সংস্কার এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পদক্ষেপ কার্যকর হলে রাজস্ব ঘাটতির সমস্যা অনেকাংশে নিরসন করা সম্ভব হবে।
