ঢাকা মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫ - ৯:৫৬:৩৮ পিএম

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন

১২ মার্চ, ২০২৫ | ১০:১৫ এএম

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন

ছবি: সংগ্রহ

ক্রমাগত লোকসানে বিপর্যস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ, একীভূতকরণ বা বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের বিধান রেখে "সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ (ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়) আইন, ২০২৫" নামে নতুন আইন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

 

 

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার লাগাতার লোকসান সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনা কঠিন করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের এখতিয়ার দিতে নতুন আইন করা হচ্ছে, যা অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে।

 


অর্থ বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে পারবে। স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ, একীভূতকরণ বা বিলুপ্তির ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

 


তথ্য অধিকার আইনের বিধান অনুসারে, প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে তাদের আর্থিক ও প্রশাসনিক তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। সরকার প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ পরিচালক বা উপযুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবে।

 

 

বর্তমানে দেশে ১৩১টি আর্থিক ও ৪৯টি অ-আর্থিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রয়েছে, যেখানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। বাজেট তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসব সংস্থার মোট লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৯ হাজার কোটি টাকা।

 

 

অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৯টি অ-আর্থিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া, ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত ৩০টি সংস্থার ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।

 

 


বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) – ২৪৭ কোটি টাকা লোকসান। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) – ২৯০ কোটি টাকা লোকসান। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) – ১,৩৩৫ কোটি টাকা লোকসান।

 


সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, "আগেও লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে। শুধুমাত্র স্টিয়ারিং কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে এটি কার্যকর হবে না, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"

 

 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, "সরকারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণেই লোকসান বাড়ছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কতটা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, সেটাই প্রশ্ন। শুরু করা গেলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারে।"

 

 


২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারীকরণ কমিশন গঠন করেছিল, তবে ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, আর কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করা হবে না। পরবর্তীতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করা হয়।

 

 

তবে সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সরকার নতুন করে বেসরকারীকরণ ও লোকসানি প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই আইন কার্যকর করা কঠিন হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন