ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১১:৩০:৩৫ এএম

রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিশ্রুত দিয়ে, ঋণের টাকা দিচ্ছে না ভারত

১৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:৪৬ এএম

রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিশ্রুত দিয়ে, ঋণের টাকা দিচ্ছে না ভারত

ছবি: সংগ্রহ

বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিশ্রুত ঋণের টাকা দিচ্ছে না ভারত। প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিতে যে বাড়তি ঋণ প্রয়োজন, সে বিষয়েও কিছু বলছে না দেশটি। সাড়া দিচ্ছে না ঠিকাদার নিয়োগেও। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রকল্পটি। বাড়তি ঋণের জন্য বিকল্প উৎস অনুসন্ধানের চিন্তা করছে সরকার। প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির সভার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

গত ৩১ অক্টোবর রেল সচিব আবদুল বাকীর সভাপতিত্বে স্টিয়ারিং কমিটির এ সভা হয়। সভার নথি সূত্রে জানা গেছে, ৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে প্রকল্প অনুমোদন করা হয় ২০১৮ সালে। তখন পরিকল্পনা ছিল ২০২৩ সালের জুনে কাজ সম্পন্ন হবে। পরে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ রেললাইনের নির্মাণ কাজই শুরু হয়নি। ফলে প্রকল্প মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্প অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ।

 

প্রকল্প অনুমোদনের সময় ধরা হয়েছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে সই হওয়া লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে ভারত। তবে বিস্তারিত নকশার পর প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ জন্য বাড়তি ৩০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ প্রয়োজন। কিন্ত বর্ধিত ঋণ অনুমোদন দূরে থাক; আগের ঋণের অর্থই ছাড় করছে না ভারত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটি এক টাকাও দেয়নি।

 

স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বলা হয়, ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিটি ধাপ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এবং দেশটির এক্সিম ব্যাংককে অবহিত করা হয়েছে। অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়টিও দ্বিপাক্ষিক সভায় উপস্থাপন করা হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয় ভারতকে। এর তিনটি প্রকল্পের প্রাকযোগ্যতার শর্ত নির্ধারণ করে ২০২৩ সালে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও, ভারতের কাছ থেকে জবাব মেলেনি।

 

রেল সূত্র জানায়, ঋণের শর্তানুযায়ী ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ করবে। পরামর্শক হিসেবেও কাজ কারছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ৯৮ কোটি টাকার চুক্তিতে রাইটস ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং আরভি ইন্ডিয়া সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ পায়। কিন্তু দেশটির সরকারের অনুমোদন না মেলায় দরপত্র আহ্বান এবং ঠিকাদার নিয়োগ করা যাচ্ছে না।

 

সভায় ইআরডি প্রতিনিধি জানান, অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ঋণ অনুমোদনে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানানো হলে বলা হয়েছিল, শিগগির তারা জানাবে। কিন্তু একাধিক চিঠি দিয়েও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি।

 

জানা গেছে, প্রকল্প ব্যয় কমাতে মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয় সভায়। তবে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভবিষ্যতের রেল যোগাযোগ চিন্তা করে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা ভারতীয়রা দেশে ফিরে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ভারতীয় ঋণের অর্থে নির্মাণাধীন কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ প্রকল্পের কাজও। গত ৩০ আগস্ট নয়াদিল্লীতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে করে চলমান প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

 

বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পের জন্য ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রায় ৪২১ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ এগোলেও, বগুড়ায় বাকি জমি অধিগ্রহণের কাজ পিছিয়ে রয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বলা হয়, সিরাজগঞ্জে অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ শেষে অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বগুড়ায় প্রাথমিক কাজ শেষে প্রস্তাব পাঠানো হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। অধিগ্রহণ সম্পন্ন শেষে ঠিকাদারকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব।

 

বর্তমানে ঢাকা রংপুরে বিভাগের জেলাগুলোতে ট্রেন যায় পাবনার ঈশ্বরদী ঘুরে বগুড়ার সান্তাহার হয়ে। এ ঘুরোপথের কারণে শত কিলোমিটার বাড়তি পথ পাড়ি দিতে হয় উত্তরের যাত্রীদের। রেলের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা-বগুড়ার বর্তমান দূরত্ব ৩২৪ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে; সময় বাঁচবে তিন ঘণ্টা।

 

২০০৫ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রথম বগুড়ায় এ রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এডিবির অর্থায়নে তখন প্রাক সমীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু অর্থায়ন যোগাড় না হওয়ায় প্রকল্পটি এগোয়নি। এক যুগ পর ২০১৭ সালে ভারতের তৃতীয় এলওসির ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ৫৫৮০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে ঠিক হয়, ৩১৪৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত। বাকি ২৪৩৩ টাকা যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।