ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৯:২৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ
রোজার পণ্যে সেই পুরনো নৈরাজ্য
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৯:২৯ এএম

ছবি: সংগ্রহ
আর মাত্র এক দিন পর রোজার মাস শুরু। ঠিক তার আগ দিয়ে বাজারে রোজার পণ্যগুলো নিয়ে সেই পুরনো নৈরাজ্য শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ইফতারিতে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সে সব পণ্যের কয়েকটির দাম এক লাফে দ্বিগুন হয়ে গেছে।
ইফতারি অন্যতম অনুসঙ্গ বেগুনি তৈরি হয় বেগুন দিয়ে-সেই বেগুন ইতোমধ্যেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। শরবত বানানোর মূল উপকরণ লেবুর হালি এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনগুন বেড়ে ১২০ টাকা ছাড়িয়েছে।
এছাড়া ধনে পাতা, পুদিনাপাতা, শশা, কাঁচা মরিচ এবং পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে বেশ খানিকটা। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
এবার সবজির ভরপুর মৌসুমে রোজার মাস হওয়ায় আগে থেকেই সবজির দাম একেবারে ক্রেতার নাগালেই ছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্তও শিম, ফুলকপি-বাঁধা কপি, করলা, মুলা-গাজর, টমেটোর দাম ক্রেতার নাগালেই রয়েছে। বেগুন, লেবু, ধনে পাতা, পুদিনাপাতা, শশা, কাঁচা মরিচ এবং পেঁয়াজের দামও সপ্তাহ খানেক আগেও একেবারে ক্রেতার নাগালেই ছিল।
তবে লেবুর দাম গত তিন-চার দিন ধরে বাড়তে বাড়তে বৃহস্পতিবার এক হালিরদাম ১২০ টাকা ছাড়িয়েছে। আর বেগুনের (বিশেষ করে লম্বা বেগুন) দাম ৩০-৪০ টাকা থাকলেও দাম বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাতারাতি লম্বা বেগুনের দাম বেড়ে গেছে দ্বিগুনেরও বেশি। রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখানে লম্বা বেগুন ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
অথচ গত সপ্তাহেও এ বাজারে লম্বা বেগুনের কেজি ছিল ৩০ টাকা, আর গোল বেগুনের কেজি ছিল ৪০ টাকা।
এমন তথ্য জানিয়েছে এ বাজারের সবজি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, গত এক-দেড় মাস ধরে সবজির বাজার একেবারে ঠান্ডা ছিল। কারণ এবার দেশে প্রচুর সবজির উৎপাদন হয়েছে, বাজারে সরবরাহও প্রচুর। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, মুলার মতো কিছু পণ্য তো একেবারে পানির দামে বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, বেগুনের দামও ক্রেতার নাগালেই ছিল। তবে মোকামে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি গত দুই দিন ধরে বেগুনের দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে আমরা পাইকারি দোকান থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বেগুন কিনতে পারলেও বৃহস্পতিবার কিনেছি ৫০ টাকা কেজিতে, বিক্রি করেছি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর আজকে মিরপুর শাহআলী মাজারের সামনে পাইকারি মোকাম থেকে বেগুন কিনেছি ৮০ টাকা কেজি, আমি বিক্রি করছি ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। যে অবস্থা দেখছি, তাতে বেগুনের দাম আরো বাড়বে।
আরো কয়েকটি বাজার ঘুরেও বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেমন শেওড়াপাড়া বাজারে লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, গোল বেগুন ৮০ টাকায়। মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারে লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আবার কারওয়ান বাজারে লম্বা বেগুন ৯০ টাকা এবং গোল বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা রোজার আগে সেই পুরণো নৈরাজ্য শুরু করে দিয়েছেন। বাজারে এতো বেশি পরিমাণে বেগুনের সরবরাহ রয়েছে, তাতে বেগুনের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।
কল্যাণপুর নতুন বাজারের ক্রেতা আনিসুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, সবজির বাজারে কি এমন ঘটলো যে রাতারাতি বেগুনের কেজি ৪০ থেকে ১০০ টাকা হয়ে যাবে। আসলে রোজা আসলেই যে দেশের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবারও তার প্রমাণ রাখলেন। এবার অন্তত আশা করেছিলাম, রোজার মাসে দেশের মানুষ কম দামে পণ্য পাবে, কিন্তু সে আশা আর পূরণ হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
এদিকে বেগুনের মতোই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে লেবুর দাম। রমজান এবং গরমকে কেন্দ্র করে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। এ অবস্থায় রোজার ঠিক আগ মুহূর্তে লেবুর দাম কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত সপ্তাহেও যে লেবুর দাম ছিল ২০-৩০ টাকা হালি, সেটি এখন কিনতে সর্বনিম্ন গুনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। আর আকার-আকৃতি, জাত ও মানভেদে হালিপ্রতি লেবু ৮০, ১০০ এমনকি ১২০ টাকাও দাম চাওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন আকার আকৃতি এবং জাতের লেবু এনেছেন বিক্রেতারা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে এলাচি লেবু (লম্বা আকৃতির লেবু)। এরসঙ্গে কলম্বো (গোল আকৃতির লেবু), কাগজী লেবুও রয়েছে। অধিকাংশ দোকানেই লেবুর দাম নির্ধারিত হচ্ছে আকৃতি ভেদে। লেবু যত বেশি বড় দামও তত বেশি। তবে যেকোনো জাতের লেবুতে সর্বনিম্ন ৬০-৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিভাবেই বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে লেবু। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আবার রোজা ও গরমের কারণে চাহিদা বেশি হওয়ায় বাজারে অনেক ব্যবসায়ী পর্যাপ্ত লেবু পাননি। যা লেবুর দামে প্রভাব ফেলেছে।
কারওয়ান বাজারের লেবু বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ৪ ধরনের লেবু এনেছি। এর মধ্যে একটি জাতের আকার সবচেয়ে বড়। সেটি কিনতে হয়েছে হালি ১০০, বিক্রি করছি ১২০ টাকায়। লম্বা বড় জাতের লেবুর হালি কিনেছি ৮০ টাকায় বিক্রি করছি ১০০ টাকায়। আর ছোট-মাঝারি আকৃতির লেবুর হালি ৬০ টাকা। এটিই সর্বনিম্ন দাম। সবচেয়ে ছোট লেবুও ১৫ টাকা পিস হিসেবে পাইকারি মার্কেটে দাম চেয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই। প্রতিবছরই রোজার শুরুতে এরকম বাড়তি দাম থাকে।
আরেক বিক্রেতা বলেন, দাম যেমন বেশি তেমন মানও ভালো। প্রতিবছরই রোজার আগে দাম এরকম বেড়ে যায়। তাছাড়া এখন গরম শুরু হয়েছে শরবতের জন্যও ব্যাপক চাহিদা। পাইকারি বাজারেই বাড়তি দাম দিয়ে আমাদের কিনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও যেই লেবু ৪০ টাকা হালি ছিল সেটি এখন ৮০-৯০ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না। রোজার মাস ধরে এমন চড়াই থাকবে। আবার পাহাড়ি লেবু বাজারে নামলে তখন দাম কমে আসবে।
লেবুর বাড়তি দাম নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারাও। এক ক্রেতা বলেন, আজ রোজার বাজার করেছি। এখন লেবু কিনতে এসেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভালো মানের লেবুর হালি ৮০ টাকা চাচ্ছে। আর সাইজে বড়গুলো ১০০ টাকা চাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ৮০ টাকায় এক হালি নিতে হলো। দাম কমলে আবার নেবো। রমজান মাসজুড়ে লেবুর বাড়তি দাম থাকলে শরবতের ক্ষেত্রে লেবুর বদলে অন্য উপাদানের শরবতে প্রাধান্য দিতে হবে।
